থানায় আত্মহত্যা : লাশ হস্তান্তরে পুলিশের শর্ত
রাজধানীর হাতিরঝিল থানার হাজত থেকে উদ্ধার হওয়া সুমন শেখের লাশ হস্তান্তরে পুলিশি শর্তের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুমন শেখের স্ত্রী জান্নাত আক্তারের অভিযোগ, পুলিশ লাশটি সরাসরি গ্রামে নেওয়ার শর্তে লাশটি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু, তাঁরা রামপুরার বাসায় লাশটি নিতে চান।
আজ রোববার বিকেলে মুঠোফোনে জান্নাত আক্তার এ অভিযোগ করেন বলেন, আমরা কোর্টে মামলা করতে আসছি। কিন্তু, কোনো উকিল মামলায় লড়তে সাহস পাচ্ছেন না।
জান্নাত আক্তারের ভাই মোশারফ গাজী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুলিশ বারবার কল দিচ্ছে লাশ নিতে। আমরা হাসপাতালে গেলাম। কিন্তু, শর্ত হচ্ছে লাশ গ্রামে নিতে হবে। রামপুরায় বাসায় নেওয়া যাবে না। কারণ হিসেবে পুলিশ বলছে, এ নিয়ে এলাকাবাসী আবার বিক্ষোভ করতে পারে।’
মোশারফ গাজী আরও বলেন, ‘সঠিক ময়নাতদন্ত ছাড়া আমরা লাশ নিতে চাই না। এখন লাশ পুলিশের কাছে থাকুক। আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই। পুলিশকে কিছু বলতে গেলে, তারা গালি দেয়। মনে হয়, মারতে আসে। কিন্তু, আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’
‘আমরা আদালতে গিয়েছিলাম। তিন-চারজন উকিলের কাছে গেলাম। কেউ মামলা চালাতে সাহস করল না। আবার সরাসরি নাও বলল না। বলল, দেখছি। এই করতে করতে সময় শেষ। মামলায় করতে পারলাম না আদালতে। এখন বাসায় যাচ্ছি। আমরা আবার আন্দোলনে যাব। বিক্ষোভ করব। সড়ক অবরোধ করব।’
গত শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে হাতিরঝিল থানার হাজতখানায় আত্মহত্যা করেন সুমন শেখ। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। সুমন শেখের পরিবার থানার সামনে বিক্ষোভ করে।
এ ব্যাপারে জানতে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদের কাছে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গ সূত্র জানায়, শনিবার বিকেলে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্টে মরদেহের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করেনি।
স্বজনদের প্রশ্ন, পুলিশ তো বাসা থেকে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পেটাতে পেটাতে থানায় নিয়ে যায় সুমনকে। থানায়ও নির্যাতন করা হয় ৫ লাখ টাকা দাবি করে। পেটানোর সেই দাগগুলো কোথায় গেল।
নিহত সুমন মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে রামপুরায় ইউনিলিভারের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র ‘পিউরইট' বিপণন অফিসে কর্মরত ছিলেন। পুলিশের দাবি, ওই অফিসের পক্ষ থেকে দায়ের করা ৫৩ লাখ টাকা চুরির মামলায় সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার রাত ৩টা ৩২ মিনিটে সুমন থানার হাজতখানায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে সুমনের পরিবার বলছে, সুমন ভোররাতে ‘আত্মহত্যা’ করলেও পুলিশ শনিবার বিকেলে তাদের খবর দেয়।
সুমন রাজধানীর পূর্ব রামপুরায় ৬ বছর বয়সী সন্তান রাকিব ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার দক্ষিণকান্দি গ্রামে।