দৈনিক দিনকাল খুলে দেওয়ার দাবিতে ডিইউজের সমাবেশ
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দৈনিক দিনকাল পত্রিকা খুলে না দিলে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে, একাংশ) নেতারা। আজ রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ডিইউজে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম এক ভয়ঙ্কর সময় পার করছে। মুক্ত সাংবাদিকতা দূরে থাক সাংবাদিকদের প্রাণ রক্ষাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই গণমাধ্যমের উপর খড়গ নেমে এসেছে। ১৯৭৫ সালে চারটি পত্রিকা রেখে সব গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এবারও ক্ষমতায় এসে অসংখ্য পত্রিকা ও টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে। ৫০ জন সাংবাদিক হত্যা করেছে। দৈনিক দিনকাল, দৈনিক আমার দেশসহ অন্তত ৫০০ পত্রিকা বন্ধ হয়েছে এই সরকারের আমলে।
দৈনিক দিনকাল পত্রিকাসহ বন্ধ সব মিডিয়া খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সাবাদিক নেতারা বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া না হলে প্রেস কাউন্সিল ও সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। এ সময় তাঁরা সাগর-রুনীসহ সব সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচারের দাবি জানান।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান সাজুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও দৈনিক দিনকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, কলামিস্ট ড. মাহবুব হাসান, ডিইউজের সহসভাপতি বাছির জামাল ও রাশেদুল হক, সাবেক সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসাইন, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাহী সদস্য আব্দুস সেলিম, এ কে এম মহসীন, জাকির হোসেন, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য রফিক লিটন প্রমুখ।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অসংখ্য মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দৈনিক দিনকাল বন্ধ করেছে। দিনকাল বন্ধের প্রতিবাদ ইতোমধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় ছাড়া গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এজন্য এই সরকারের পতন আন্দোলনে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
রুহুল আমিন গাজী আরও বলেন, ‘অবিলম্বে দৈনিক দিনকাল খুলে না দিলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’
বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, এই সরকার দিনকাল বন্ধ করে দিয়ে অতীতের মতো আরেকটি কালো দিন উপহার দিয়েছে। এর আগে দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ বহু সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে একের পর এক কালো দিবস উপহার দিয়েছে। এই সরকার গণমাধ্যমের শত্রু হিসেবে বারবার প্রমাণ দিয়েছে। দৈনিক দিনকাল বন্ধ করে আবারও প্রমাণ দিল। এভাবে দিনের পর দিন মিডিয়ার উপর কালো থাবা আর সহ্য করা যায় না। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দিনকাল পত্রিকা খুলে না দিলে প্রেস কাউন্সিল ও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে। সেই আন্দোলনে দৈনিক দিনকালসহ বন্ধ সব গণমাধ্যম খুলে দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, এই সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই মিডিয়া বন্ধ করে বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। এখনও তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে দৈনিক দিনকাল বন্ধ করেছে। দিনকালসহ সব মিডিয়া খুলে না দিলে সরকারের পরিণাম ভালো হবে না। তাই অবিলম্বে দিনকালসহ সব বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিন। তা না হলে এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক ইউনিয়ন সমাবেশ করেছে।
অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, দৈনিক দিনকাল বন্ধ করে সরকার নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে দৈনিক দিনকাল বন্ধের খবর প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তার পরও সরকার শুধু গায়ের জোরে দিনকাল পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করেছে। আমি অবিলম্বে দিনকাল পত্রিকা খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে দিনকাল খুলে না দিলে আপনাদের ভয়াবহ মাশুল দিতে হবে। অতীতেও গণমাধ্যম বন্ধ করে সরকারের শেষ রক্ষা হয়নি, এবারও দিনকালসহ বিভিন্ন মিডিয়া বন্ধ করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।
ডিইউজের সভাপতি ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম এক ভয়ঙ্কর সময় পার করছে। বর্তমান সরকারের সময় অন্তত ৫০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। পাঁচ শতাধিক সংবাদ মাধ্যম বন্ধ করে হাজার হাজার সাংবাদিকের পরিবারের আহার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে এ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ দেন।
কাদের গনি চৌধুরী আরও বলেন, সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, গুম-খুনের কথা যাতে জনসমক্ষে উন্মোচিত হতে না পারে, সে জন্য একের পর এক পত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন সাংবাদিকদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। আজ সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না।
ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, আওয়ামী লীগের কাজই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা। স্বাধীনতার পর তারা চারটি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। এবারও তারা দৈনিক দিনকালসহ অসংখ্য মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তারা গণমাধ্যমের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। যে যেখানে আছেন সবাই একত্রে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, দৈনিক দিনকাল পত্রিকা বন্ধ সরকারের সবশেষ আক্রমণ। এর আগেও অসংখ্য পত্রিকা সরকার বন্ধ করেছে। বর্তমানে কেউ বলে না দেশে গণতন্ত্র আছে। এই সরকার কর্তৃত্ববাদী সরকার। এই সরকারের পতনই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে।