পদ্মা সেতুতে ধাক্কা : সমস্যা নিয়ে চলছিল ‘ফেরি কাকলী’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/08/13/ferry_2.jpg)
কারিগরি সমস্যা নিয়ে চলছিল ‘ফেরি কাকলী’। বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে (বিআইডাব্লিউটিসি) লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন ফেরির ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. বাদল হোসেন। তবে এরপরও ফেরিটি চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
‘ফেরি কাকলী’র ভারপ্রাপ্ত মাস্টার বাদল হোসেন বলেন, ‘ফেরিটি সেতুর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী স্থান দিয়েই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত ও বাতাস। এ কারণে ফেরিটি যেভাবে আসার কথা ছিল সেইভাবে আসতে পারেনি। পরে ১০ নম্বর পিলারের সঙ্গে ফেরির আঘাত লাগে। এতে ফেরি কিংবা ফেরিতে থাকা যানবাহনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এমনকি যাত্রী সাধারণ ধাক্কার সময় টের পর্যন্ত পায়নি। সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহলরত ছিল।’
বাদল হোসেন দাবি করেন, গত ১১ আগস্ট তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, এ ফেরি দিয়ে বর্তমানে পদ্মা চলাচল করা সম্ভব নয়। প্রচণ্ড স্রোতে ফেরি কাজ করে না। ওই লিখিত চিঠিতে ফেরিটি অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তরের কথাও বলা হয়। কিন্তু লিখিত দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক মেরিন আহমেদ আলী বলেন, ‘মাস্টারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমার অফিসে জমা দিয়েছেন কিন্তু আমি জানি না। তিনি ১১ তারিখের জমা দিয়েছেন, আমি জানতে পেরেছি আজকে সন্ধ্যায়। আমি তাকে প্রশ্ন করেছি যে, তুমি জমা দিয়েছ আমাকে জানাওনি কেন?’
মেরিন আহমেদ আলী আরও বলেন, ‘আজকে সকালবেলা যে ফেরি কাকলী দুর্ঘটনা ঘটেছে, এটি ফেরির যে মাস্টার তার দোষ। আমি বিটিএস সিস্টেম দেখেছি, এখানে তার ভুলের কারণে দুর্ঘটনা হয়েছে। একটি ফেরির কোনো সমস্যা হলে সবার আগে আমি জানি। ঘাট এলাকায় রেখে ফেরির কাজ সম্পন্ন করা হয়। যতক্ষণ কাজ সম্পন্ন না হয় ঘাট থেকে সেই ফেরি চলাচল নিষেধ।’
নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-মাদারীপুরের বাংলাবাজার রুটে চলচলারত ফেরি কাকলী সঠিকভাবে পরিচালনায় ‘ব্যর্থ হওয়ায়’ ওই ফেরির ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. বাদল হোসেন এবং হুইল সুকানী আব্দুর রশিদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি শুক্রবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।
আজ সকাল ৭টার দিকে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে আবারও ধাক্কা দেয় ফেরি। বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসার পথে ‘ফেরি কাকলী’ এ ধাক্কা দেয়।
বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানান, ফেরিটির পদ্মা সেতুর ১১ ও ১২ পিলারের মধ্য দিয়ে আসার কথা। কিন্তু, সেটি নদীর প্রচণ্ড স্রোত ও বাতাসের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরিটির বাইরের অংশের একটু ক্ষতি হয়। এ ছাড়া আর কিছু হয়নি। ধাক্কা লাগা অংশটি পানির স্তরের ওপরে থাকায় ফেরিতে পানি ওঠেনি। পদ্মা সেতুর পিলারেরও কোনো ক্ষতি হয়নি।
সাফায়েত আহমেদ আরও জানান, ধাক্কা লাগার পর ফেরিটি নিরাপদে শিমুলিয়া ঘাটে এসেছে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এর আগেও তিনবার বাংলাবাজার ঘাট থেকে আসার পথে পদ্মা সেতুর পিলারে আঘাত করে ফেরি। গত ২০ ও ২৩ জুলাই ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারে এবং ৯ আগস্ট ১০ নম্বর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগে। এসব ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি), তদন্ত কমিটি গঠনসহ ফেরি চালকদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।