বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট ভালো হয়েছে : ইসি সচিব

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনে ৭০-৭৫ ভাগ ভোট পড়বে বলে মনে করি। তবে চূড়ান্তভাবে বলতে পারব সব ফলাফল এলে।’
আজ শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেশের ৬০টি পৌরসভায় টানা ভোটগ্রহণ হয়। তারপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয় ভোট গণনা। এর মধ্যেই আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ইসি সচিব এই মন্তব্য করেন।
টানটান উত্তেজনা, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হাতবোমা বিস্ফোরণ আর ভোট বর্জনের মতো ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। ভোট চলাকালে চারটি পৌরসভায় ভোট বর্জন করেন বিএনপির মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থীরা। একটিতে ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী। এ ছাড়া বেশ কিছু কাউন্সিলর পদপ্রার্থীও ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
এই যখন পরিস্থিতি তখন সব মিলিয়ে ভোট কেমন হলো- এমন এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত ভালো। আপনাদের প্রচারমাধ্যমে দেখা গেল, প্রচুর ভোটার সেখানে উপস্থিত রয়েছে।’
ইসি সচিব বলেন, ‘তবে দু-একটি জায়গায়, কিছু কিছু দুষ্কৃতকারী থাকে সব সময়। যারা সুযোগসন্ধানী। দেখা গেছে, তারা নির্বাচনি কাজকে বিঘ্ন করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু আমাদের নির্বাচনি দায়িত্বে পালনে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং তাদের নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।’
মো. আলমগীর আরো বলেন, ‘আমাদের ৬০টি পৌরসভার মধ্যে শুধু বোয়ালমারি পৌরসভার একটি কেন্দ্রে, সেখানে দুপুর ১২টার পর কিছু দুষ্কৃতকারী হঠাৎ করে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে, বাক্সটা ভেঙে ফেলেছে। যেহেতু ভেঙে ফেলেছে সেহেতু তা নিয়ে যেতে পারেনি। কিন্তু বাক্স ভেঙে ফেলার কারণে ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছেন প্রিসাইডিং অফিসার। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের একটি কেন্দ্রে বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, সেটিও স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ৬০ পৌরসভার সব কেন্দ্রে সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। প্রচুর ভোটার সেখানে ভোট দিয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুষ্কৃতকারীরা ভোটকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে। তাদের উদ্দেশ্যই থাকে, সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে না হতে পারে। সেটাকে ব্যর্থ করে দিয়ে, আমি বলব, ইসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদের সবার সহযোগিতায় সুন্দর একটি নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। ৪টা পর্যন্ত ভোট হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ এখনো ভোট দিচ্ছে (তখন সময় প্রায় ৬টা)। যারা ৪টার আগে লাইনে দাঁড়িয়েছিল, তাদের এখনো ভোটগ্রহণ চলছে।’
ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আরো বলেন, ‘এই পর্যন্ত আমরা যতগুলো কেন্দ্রের খবর নিয়েছি, আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, সেখানে ইভিএমে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৮০ ভাগ। সম্পূর্ণ তথ্য পেলে তখন ঠিকঠাক পরিসংখ্যান আপনাদের দিতে পারব। যেমন- রাজশাহীর আড়ানীতে ইভিএমে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা দেখেছি, ব্যালটে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে। এটা অনেক আগের হিসাব, পরে এটা বাড়বে। সেখানে ৫৫ ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে। আর ব্যালটের ক্ষেত্রে রাজশাহীর বোয়ালমারিতে ৭৫ ভাগ ভোট পড়েছে। আর সবচেয়ে কম পড়েছে দিনাজপুরে, সেখানে পড়েছে ১৫ ভাগ। এটা কিন্তু সর্বশেষ হিসাব নয়। ইভিএমের ভোটের হিসাব আমরা রাত ৯টার মধ্যে পেয়ে যাব।’
ইসি সচিব মো. আলমগীর যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, তার কিছু আগেই নিজের কার্যালয়ে ভোট নিয়ে নিজের মতামত লিখিতভাবে তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, 'আজ শনিবার আমি সাভার পৌরসভার তিনটি ভোটকেন্দ্রের ১৮টি বুথ পরিদর্শন করি। দুপুর ১টা পর্যন্ত ওইসব ভোটকেন্দ্রে সাত হাজার ৩১১ জন ভোটারের মধ্যে এক হাজার ২৩২ জন ভোট প্রদান করেছেন। তিনটি বুথে আমি তিনজন বিরোধীদলীয় প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেখতে পাই। কিন্তু অন্য কোথাও এজেন্ট ছিলেন না। এ ছাড়া সাভার পৌর এলাকায় আমি বিরোধীদলীয় প্রার্থীর কোনো পোস্টার দেখতে পাইনি। এমতাবস্থায়, এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না। যেকোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তা সিদ্ধ হয় না।’
মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে জবাবে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘নিরপেক্ষ আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ডেফিনিশন আলাদা। নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, রাষ্ট্রযন্ত্রের। তারা সেই আয়োজন করেছে। এখন যদি কেউ নির্বাচনে তার প্রতিনিধি না দেন বা অংশগ্রহণ না করেন, সেক্ষেত্রে উনারা এটা বলতেই পারেন। কিন্তু নির্বাচনে না এলে তো নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। হতে পারে, ওই রাজনৈতিক দলের এটা একটা রাজনৈতিক কৌশল।’
ইসি মাহবুব বলছেন, নির্বাচনে সহিংসতা বেড়ে গেছে অপরদিকে আপনি বলছেন সুন্দর নির্বাচন হয়েছে- এ কথার জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কেমন হয়েছে তা আপনারাই ভালো জানেন। সব স্থানে আপনাদের লোক ছিল। গণমাধ্যমে আপনারা যা দেখিয়েছেন, আমরা মনে করি ওটাই সঠিক। সব স্থানে সুন্দর ভোট হয়েছে। আর ঝামেলা হয়েছে পাঁচ থেকে সাতটি কেন্দ্রে, যা খুবই নগণ্য। আমাদের দেশে এমন কোনো নির্বাচন আমরা দেখেনি, যেখানে সহিংসতা হয়নি। কারণ, এটা না করলে দুষ্কৃতকারীদের ভালো লাগে না। তারা এটা করতে চায়।’