বিচ্ছেদের ছয় মাস পর আদালতের মাধ্যমে সংসারে ফিরলেন তাঁরা
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/04/25/panchagarh-photo.jpg)
দীর্ঘ ১৭ বছরের সংসারজীবন অতিবাহিত করেছিলেন শাহানুর ইসলাম ও আকতারা বানু। এ সময়ে তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় তিন সন্তান। সংসারের ছোটখাটো কলহের জেরে ছয় মাস আগে ওই দম্পতির সংসারজীবনে ফাটল ধরে। রাগের বশবর্তী হয়ে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। দুই মেয়েকে নিয়ে আকতারা বানু বাবার বাসায় ফিরে যান। ছেলে রয়ে যায় বাবার সঙ্গে।
এমন পরিস্থিতিতে ওই দম্পতির জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ, বিপাকে পড়ে তিন সন্তান।
অবশেষে, গতকাল রোববার পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মতিউর রহমানের হস্তক্ষেপে বিচ্ছেদ থেকে মুক্তি পান ওই দম্পতি। বিচারকের খাস কামরায় মৌলভী ডেকে দুই আইনজীবী ও পরিবারের লোকজনের সামনে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক এক হাজার টাকা নগদ দেনমোহরে তাঁদের আবার বিয়ে পড়ানো হয়।
ওই দম্পতির বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায়।
আদালত, আইনজীবী এবং ওই দম্পতি সূত্রে জানা গেছে, দাম্পত্য কলহের জেরে ১৭ বছরের সংসারজীবনে ছয় মাস আগে তাঁদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এ ঘটনার পর আকতারা বানু স্বামীর বিরুদ্ধে গত ৩০ মার্চ আদালতে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত সমন জারি করেন। গতকাল রোববার আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন শাহানুর। তাঁর ইচ্ছা ছিল আদালতেই দেনমোহরের এক লাখ এক হাজার টাকা পরিশোধ করবেন। কারাগারে গেলেও আকতারার সঙ্গে ঘর-সংসার করবেন না বলেই জেদ চেপে ধরেন তিনি।
তবে, শাহানুর আদালতের এজলাসে জামিন নিতে উপস্থিত হলে নাটকীয় ঘটনার অবতারণা হয়। তিন সন্তানকে দেখে ওই দম্পতি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিচারকও তিন সন্তানের মুখ চেয়ে ওই দম্পতিকে কলহ ভুলে আবার সংসারে ফেরার অনুরোধ করেন। বিচারকের কথায় কিছুক্ষণ চুপ থেকে চিন্তা-ভাবনা করেন ওই দম্পতি। পরে আবারও সংসারে ফেরার কথা জানান তাঁরা। এরপর বিচারকের খাস কামরায় আদালতের মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল খালেক তাঁদের বিয়ে পড়ান। এরপর আপসনামা দাখিলের পর আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন শাহানুর ও আকতারা বানু।
আকতারা বানু বলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এখন আমরা আবারও এক সঙ্গে থাকব। আমি বিচারকের প্রতি কৃতজ্ঞ।
শাহানুর রহমান বলেন, ‘আমরা সুখে-শান্তিতেই ছিলাম। পারিবারিক কাজকর্ম নিয়ে একটু ঝগড়া-বিবাদ হলেই আমার স্ত্রী তাঁর বাবার বাড়িতে চলে যেতো। তাই, রাগে-ক্ষোভে আমি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলাম। তালাকের পর আমি খুব কষ্টে জীবনযাপন করেছি। আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করায় আমি আরও রেগে যাই। আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক আমাকে তিন সন্তানের দিকে চেয়ে আপসের কথা বলেন। তখন ভেবে-চিন্তে আমি আপস করার সিদ্ধান্ত নিই।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমরাও চেয়েছিলাম তাঁদের সংসারটি টিকে থাকুক। বিচারক মহোদয় আমাদের সে সুযোগটিই করে দিয়েছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাজিজুর রহমান বলেন, ‘খুব সামান্য বিষয়ে তালাক দিয়েছিলেন শাহানুর। বিচারক মহোদয়ের সঙ্গে আমরাও তাঁদের সংসারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। এ বিচারে একটি সংসার রক্ষা পেয়েছে। আমরা বাদী-বিবাদী আইনজীবীরাও এতে খুশি হয়েছি।