বুকে কষ্ট চেপে সাংবাদিক তুলির মা বললেন ‘আমি কাঁদছি না’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/07/16/tuli.jpg)
মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে চাপা কষ্ট আর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল। এ কান্না একজন সন্তানহারা মায়ের। দৃঢ় মনের এই মা তাঁর সন্তানের মঙ্গল কামনা করলেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। তিনি হলেন ‘গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা’ করা সাংবাদিক সোহানা পারভীন তুলির মা পারভীন সুলতানা।
সোহানা পারভীন তুলি ‘গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন’ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
তুলির মা মেয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে সবার কাছে মেয়ের জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, ‘আমি কাঁদছি না। ও (তুলি) ছিল আমার সুস্থতা। আমার সম্পদ। তুলিকে আমার কাছে দিয়েছিলেন আল্লাহ। তিনিই তাঁকে তুলে নিয়েছেন। হে আল্লাহ, তুমি আমার মেয়েকে তোমার কাছে শান্তিতে রেখ।’
বিলাপ করতে করতে তুলির মা আরও বলেন, ‘আমার সন্তান আল্লাহর ইচ্ছায় চলে গেছে। যেকোনো অছিলায় চলে গেছে। হয়তো সে নিজে গেছে, নয় তো কারও প্ররোচনায়। যেভাবেই হোক, তাঁকে নিয়ে গেছে আল্লাহ। আমার কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুক। আমি মা। আমি শুধু আল্লার কাছে বলছি, আল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্য দাও।’
তুলির বাবা গাজী শাহজাহান কাস্টমসের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক। এ প্রসঙ্গে তুলির মা জানান, ‘আমি নিজেকে সামাল দিয়ে রেখেছি। কারণ, আমার একটা ছেলে আছে। আমার স্বামী আছে। সে অসুস্থ। তাদের জন্য হলেও আমাকে বেঁচে থাকতে হবে।’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/07/16/tuli-.jpg)
তুলি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকায় থাকতেন। এই পুরো সময়ের মধ্যে তুলি সর্বশেষ গত এপ্রিলে গ্রামের বাড়ি যশোর গিয়ে বেশি সময় পরিবারের সঙ্গে থেকেছেন। সেই স্মৃতিচারণ করে তুলির মা বলছিলেন, ‘গত ২৭ এপ্রিল বাড়ি আসে তুলি। পরে ১৪ মে যশোর থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার বাসে ওঠে। ২০ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় তুলি আমার কাছে ছিল। এর আগে এত সময় কখনোই থাকেনি। এ সময়ের মধ্যে তুলি আমার কাপড় ধুয়ে দিয়েছে। খাইয়ে দিয়েছে। সব সময় আমাকে আদর-যত্ন করেছে। কিন্তু, আমি বুঝতে পারিনি, আমার খাঁচা ভেঙে তুলি চলে যাবে। তবে, কেন জানি আমার মনে বারবার খোঁচা দিচ্ছিল। এবারই আমি তুলিকে বলেছিলাম, তুমি যশোর এসে চাকরি করো। বেশি টাকা না হলেও করো। যাওয়ার সময় তুলি বলে গেল, আম্মা তুমি আমার জন্য চিন্তা করো না। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করো।’
‘আমার শিরায় সমস্যা আছে। তুলি বলল—কয়েকদিন পরে এসে আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। সে সব তো আর হবে না। আমিও এবার ডাক্তারের কাছে যাব কীভাবে? যেতে পারব আমি? আমার বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/07/16/tuli3.jpg)
‘সোহানা তুলির লাইফের যত রোজগার, সে সব তাঁর বাবা-মা-ভাইয়ের জন্য দিত। যতদিন বাবা রোজগার করেছে, ততদিন ওর কোনো চিন্তা ছিল না। ২০১০ সালে যখন বাবা চাকরি থেকে অবসরে চলে গেলেন, তখন থেকে কোনো মাসে ১০ হাজার, কোনো মাসে ১৫ হাজার, আবার কোনো মাসে পাঁচ হাজার টাকাও দিত। ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ দিত।’
এসব বলতে বলতে তুলির মা আবারও কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার এখন একটাই চাওয়া। তুলি যেন বেহেশতে যায়। পরকালে যেন ভালোভাবে থাকতে পারে।’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/07/16/tuli-5.jpg)
গত বুধবার দুপুরে রায়েরবাজারের মিতালী রোডের বাসা থেকে সোহানা পারভীন তুলির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তুলিকে ফোনে না পেয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নন্দিতা বাসায় গিয়ে দরজায় নক করেন। কিন্তু, ভেতর থেকে সাড়া না পেয়ে দারোয়ানের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে তুলিকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখতে পান। পরে তিনি বিষয়টি হাজারীবাগ থানাকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তুলির মরদেহ উদ্ধার করে। এদিন হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রাথমিকভাবে মন্তব্য করে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’