বলিউডে দর্শকের অন্যতম প্রিয় জুটি শাহরুখ-কাজল। তবে দর্শকরা মনেপ্রাণে সেই জুটিকে বার বার বড় পর্দায় দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও কাজল নিজেই নাকি অনেকবার শাহরুখের সঙ্গে একই সিনেমাতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইনের

১৯৯৭ সালে যশ চোপড়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘দিল তো পাগল হ্যায়’। এই সিনেমাতে শাহরুখের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় বলিউড অভিনেতী মাধুরী দীক্ষিত ও কারিশমা কাপুরকে। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সিনেমার নায়িকা হিসেবে প্রথমে কাজলকে পছন্দ করেছিলেন নির্মাতারা। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কাজল।

‘দিল তো পাগল হ্যায়’ সিনেমাতে নিশার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় কারিশমাকে। মুখ্যচরিত্র হলেও সিনেমাতে দ্বিতীয় নায়িকার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। নিশার চরিত্রের জন্যই প্রথমে কাজলকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সিনেমার নির্মাতারা। শোনা যায়, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ সিনেমাতে দ্বিতীয় নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন বলেই তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কাজল।

২০০৪ সালে যশ চোপড়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় রোমান্টিক ঘরানার সিনেমা ‘বীর জারা’। এই সিনেমাতে শাহরুখের সঙ্গে বড় পর্দায় জুটি বাঁধতে দেখা যায় প্রীতি জিনতাকে। রোমান্টিক ঘরানার হিন্দি সিনেমার তালিকায় এই সিনেমা অধিকাংশ দর্শকেরই পছন্দের। তবে এই সিনেমার নায়িকা হিসাবে প্রীতি প্রথম পছন্দ ছিলেন না নির্মাতাদের।

বলিউডের গুঞ্জন, ‘বীর জারা’ সিনেমাতে শাহরুখের বিপরীতে জুটি বাঁধার জন্য কাজলকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো অজানা কারণে তিনি এই সিনেমাতে অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করেছিলেন।

২০০০ সালে যশ চোপড়ার পুত্র আদিত্য চোপড়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘মহাব্বতে’। বলিউডের ‘বাদশা’ শাহরুখের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেন বলিপাড়ার ‘শাহেনশা’ অমিতাভ বচ্চন। শাহরুখের বিপরীতে এই ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা যায় ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনকে। তবে বচ্চন-পুত্রবধূ নন, ছবিনির্মাতাদের পছন্দ ছিল অন্য নায়িকাকে।

শোনা যায়, ‘মহাব্বতে’ সিনেমাতে নায়িকা হিসেবে প্রথমে কাজলকেই অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন নির্মাতারা। কিন্তু কাজল সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে ঐশ্বর্যাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। কাজলের ফিরিয়ে দেওয়া প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন নায়িকা।

২০০৬ সালে কর্ণ জোহরের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তারকাখচিত সিনেমা ‘কভি আলবিদা না কহেনা’। এই সিনেমাতে শাহরুখ, প্রীতি ও অমিতাভ ছাড়াও অভিনয় করেন রানি মুখার্জি, অভিষেক বচ্চন ও কিরণ খেরের মতো বলি তারকারা। সিনেমাতে শাহরুখের স্ত্রীর ভূমিকায় দেখা যায় প্রীতিকে। চিত্রনাট্য অনুযায়ী মায়া নামের একটি চরিত্রের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় শাহরুখকে। এই মায়া চরিত্রেই প্রথমে অভিনয় করার কথা ছিল কাজলের।

বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘কভি আলবিদা না কহেনা’ সিনেমাতে মায়া চরিত্রের জন্য প্রথমে কাজলকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন নির্মাতারা। চিত্রনাট্যের খসড়াও শুনেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু মায়ার চরিত্র নির্মাণ মনে ধরেনি তাঁর।

‘কভি আলবিদা না কহেনা’ সিনেমাতে দেখা গেছে, মায়া চরিত্রটি বিবাহিত। স্বামীর সঙ্গে তার মধুর সম্পর্ক নেই। অন্য এক বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে মায়া। কাজলের দাবি, মায়ার উচিত ছিল পরকীয়ায় না জড়িয়ে বৈবাহিক জীবনে সৃষ্টি হওয়া জটিলতার সমাধান করা। যেহেতু তা হয়নি, তা-ই সেই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কাজল। তারপর সেই চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় রানিকে।

১৯৯৮ সালে মণি রত্নমের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় শাহরুখের সিনেমা ‘দিল সে…’। এই সিনেমাতে শাহরুখের সঙ্গে অভিনয় করেন মনীষা কৈরালা ও প্রীতি। মেঘনার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় মনীষাকে। তবে এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন কাজল। কিন্তু তা নাকি বুঝতেই পারেননি অভিনেত্রী। নিজের অজান্তেই সেই সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন কাজল।

কর্ণ পরিচালিত এক রিয়্যালিটি শো‘য়ের একটি পর্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কাজল। সেই পর্বে কাজলের উদ্দেশে কর্ণ বলেছিলেন যে, ‘‘আমার একটি ঘটনার কথা খুব মনে পড়ে। তখন তোমার সঙ্গে বসেছিলাম আমি। শাহরুখ খানের বাড়িতে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ সিনেমার চিত্রনাট্যের খসড়া পাঠ চলছিল। হঠাৎ তোমার ফোন বেজে উঠল। তোমায় মণি রত্নম ফোন করেছিলেন। কিন্তু তুমি তা বিশ্বাসই করোনি।’’

কাজলকে ফোন করে মণি রত্নম নিজের পরিচয় দিয়ে বার্তালাপ শুরু করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গোড়াতেই বাধা দিয়েছিলেন কাজল। মণি রত্নমের নাম শুনে কাজল ফোনের এপার থেকে বলে উঠেছিলেন, ‘‘হ্যাঁ। আর আমি টম ক্রুজ (হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা)।’’

আসলে কাজল বিশ্বাসই করতে পারেননি যে মণি রত্নমের মতো খ্যাতনামী সিনেমা নির্মাতা তাঁকে ‘দিল সে…’ সিনেমাতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিতে ফোন করতে পারেন। কেউ তাঁর সঙ্গে মজা করছেন ভেবে তিনি ফোন কেটে দিয়েছিলেন। পরে কাজল আসল ঘটনাটি জানতে পেরেছিলেন। তাই অভিনয়ের সুযোগ অজান্তেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল অভিনেত্রীর।

২০০৩ সালে আজিজ মির্জার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘চলতে চলতে’। শাহরুখের সঙ্গে এই সিনেমাতে জুটি বাঁধেন রানি। কিন্তু সিনেমার নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন কাজল। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘চলতে চলতে’ সিনেমাতে কাজলকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন নির্মাতারা। কিন্তু সেই চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি তিনি। পরে কাজলের ফিরিয়ে দেওয়া চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় রানিকে।

‘বাজিগর’, ‘কর্ণ অর্জুন’, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ ও ‘মাই নেম ইজ খান’-এর মতো একাধিক হিন্দি সিনেমাতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ-কাজল। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিলওয়ালে’ সিনেমাতে একসঙ্গে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে এই জুটিকে।