ভালো নেই ভোলার জেলেরা

ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর অনেকটা অর্থকষ্টে আছে ভোলার জেলেরা। মহাজনের ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তা ও ঠিকমতো ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার রয়েছে অভিযোগ। এমন অবস্থায় এনজিওগুলোর কিস্তির টাকা নেওয়া বন্ধ রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে দ্বীপজেলার ভোলার তিন লাখ জেলে। পাশাপাশি জেলেদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার এমন সময়ে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সীমানায় এসে ইলিশ ধরে নিচ্ছে। সব মিলিয়ে ভালো নেই ভোলার জেলেরা।
মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীবেষ্টিত জেলা ভোলা। এ জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা চালায়। ঝড়-ঝাপটার সঙ্গে যুদ্ধ করে কাটে জেলেদের সময়। তবুও তাদের মনে কষ্ট নেই। এ জেলার জেলেদের মধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরে। বাকি একভাগ জেলে বড় ট্রলার নিয়ে সাগরে ইলিশ ধরে। সরকারি নিষেধাজ্ঞার মুহূর্তে এসব জেলেরা বিভিন্ন খাল নদীর চরে ট্রলারগুলো তুলে নিয়ে জালের কাজসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
জেলার বটতলা মাছঘাট এলাকার মো. নাঈম মাঝিও কাজ করছিলেন। জেলেদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এনজিওগুলোর সাগরে ঋণের ভারে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারছি না। অথচ ভারতীয় ট্রলার মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তারা লাভবান হচ্ছে। আর আমরা না খেয়ে আছি। সরকার যে চাল দিচ্ছে তাও ঠিক মতো পাচ্ছি না। চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ভাগ করে নেয়। প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা তারা নিচ্ছে না। এ যেন চোর-পুলিশ খেলা।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে নাঈম বলেন, ‘সব জেলে-মাঝিরা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জাল ও ট্রলার করে। তবে অভিযানের সময় লোনের কিস্তি নেওয়া বন্ধ থাকা উচিত। সরকারের কাছে দাবি সরকারিভাবে জেলেদের লোন দেওয়া হোক।’
একই কথা বলেন রাধাভল্লব মাছঘাটের বিল্লাল মাঝি। তাঁর দাবি, ‘ইলিশ ধরা বন্ধ থাকলেও এনজিওগুলো টাকার জন্য এসে লাঞ্ছিত করে। এমনকি ঘরের হাড়ি-পাতিল পর্যন্ত নিয়ে যায়।’
এদিকে, অভিযানের এমন সময়ে ভারতীয় জেলেরা ইলিশ ধরে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে জেলেদের। এ বিষয়ে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো রাগ-ক্ষোভ নেই তাদের। তবে তারা হতাশ, কারণ বাংলাদেশে অবরোধ চলছেও ভারতে কোনো অবরোধ নেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতীয় হাজারও ট্রলার বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় জেলে মো. হানিফ মাঝি বলেন, ‘বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় হাজার হাজার ফিসিংবোর্ড এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। অভিযান দিলে দুই দেশে একসঙ্গে দেওয়া উচিত।’
হানিফ মাঝি আরও জানান, ‘যখন অভিযান দেওয়া দরকার সরকার তখন দিচ্ছে না। অথচ এখন ইলিশের পেটে ডিম নেই। আরও ২০ থেকে ২৫দিন পর এই অভিযান দিলে ভালো হতো।’
জেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বড় মাছ ধরা ট্রলারের মাঝি মো. নাগড় মিয়া। তিনি জানালেন ভিন্ন অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘সাগরের চেয়ে মেঘনায় খুটাজাল, বাঁধাজাল বন্ধ করা উচিত। এসব জালে একসঙ্গে যে জাটকা আটকাতে পারে, তা ট্রলারের তুলনায় ১০গুণ। সরকার এসব দিকে নজর দিচ্ছে না।’
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম এস আজহারুল ইসলামের সঙ্গে। জেলেদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে জেলেদের মতো আমিও দাবি জানাই, সরকার যেন সহজ শর্তে লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করে। যা দিয়ে জেলেরা জাল, নৌকা কিনতে পারে। তাহলে এনজিওগুলোর কাছ থেকে হয়রানির শিকার হতে হবে না।’
অবরোধ চলাকালে ভারতীয় জেলেরা ইলিশ শিকার করছে এমন কথা স্বীকার করে এম এম এজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৩ অক্টোবর এ বিষয়ে সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সব মৎস্য কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকরা বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সেক্ষেত্রে নৌ-বাহিনীর টহল জোরদার করার মাধ্যমে ভারতীয় ট্রলার যাতে মাছ ধরতে না পারে, তা নিশ্চিত করবে এমন আশ্বাস দিয়েছেন।’