মানি লন্ডারিং মামলায় নিউ বসুন্ধরার এমডি কারাগারে

সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেওয়ার তিন মাস পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে মানি লন্ডারিং মামলায় কারাগারে গেছেন বহুল আলোচিত উমেদার থেকে জমিদার হওয়া নিউ বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান তালুকদার।
আজ রোববার সকালে বাগেরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক স্বপন কুমার সরকার মান্নান তালুকদারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জি।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গত ৩ জুন হাইকোর্টের দেওয়া জামিনে স্থগিতাদেশ দিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়েছিলেন। সেই সময় আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ও আসিফ হোসেন। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস ও আশরাফ আলী।
বাগেরহাট দুদকের আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জি জানান, আজ সকালেই চিফ জুডিশিয়াল কোর্টে নিউ বসুন্ধরার এমডি আবদুল মান্নান তালুকদার আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালতের বিচারক স্বপন কুমার সরকার তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি জানান, লকডাউনের সময় আদালত বন্ধ থাকায় তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অত্মসমর্পণ করেননি বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ মে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের এমডি আবদুল মান্নান তালুকদার ও চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১০ কোটি ৩১ লাখ নয় হাজার ১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সার অবৈধ সম্পদ অর্জন, অপরাধলব্ধ আয় স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা। কোম্পানির মোট এক হাজার শেয়ারের মধ্যে আবদুল মান্নান তালুকদার ৮৫০টি, চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ৫০টি, তার মা সালেহা বেগম ও স্ত্রী জেসমিন নাহার ৫০টি করে ১০০টির মালিক।
প্রকৃতপক্ষে নিউ বসুন্ধরার চেয়ারম্যান হিসেবে আনিসুর রহমানের নাম থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন এমডি আবদুল মান্নান তালুকদার।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এমএলএসএস) আবদুল মান্নান তালুকদার স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর তিনি গ্রাহকদের প্রতি লাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রলোভন দেখান।
মান্নান তালুকদার বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কমপক্ষে ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন, যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থি।
কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি (অ্যাকাউন্ট) হিসাবে ১১০ কোটি ৩১ লাখ নয় হাজার ১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া এই বিপুল অর্থ তিনি ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করলে গত বছরের শেষের দিকে আসামিদের জামিন দেন হাইকোর্ট। জামিন পেয়ে কারামুক্তও হন তারা। এর মধ্যে দুদক ওই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল মাসে আনিসুর রহমানকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন আপিল বিভাগ। সে অনুসারে তিনি আত্মসমর্পণ করে এখন কারাবন্দি।
উল্লেখ্য, এনটিভির ক্রাইম ওয়াচে গ্রাহকের টাকা নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুদক তদন্ত করে এই মামলা দায়ের করেছিল।