মুক্তিপণ নিয়েও শিশুকে হত্যার দায়ে তিনজনের যাবজ্জীবন
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামে ঘুমন্ত মা-বাবার কোল থেকে তিন মাসের শিশু আবদুল্লাহকে অপহরণ ও পরে মুক্তিপণ নিয়ে হত্যার দায়ে তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক জেলা জজ মো. নূরে আলম আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ রায় দেন। এ সময় সব আসামি আদালতে ছিলেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া তিন আসামি হলেন মো. হৃদয় ওরফে রাহাত হাওলাদার (২১), মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার (২২) ও মো. ফায়জুল ইসলাম (২৮)। তাঁরা সবাই মোরেলগঞ্জের গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, গত বছরের ১১ মার্চ দিবাগত রাত ৩টার দিকে মোরেলগঞ্জের বিশারীঘাটা গ্রামের রেশমা বেগম ও তাঁর স্বামী দলিল লেখক মো. সিরাজুল ইসলাম সোহাগ তাঁদের তিন মাসের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় ঘুমন্ত মা-বাবার কোল থেকে শিশুটিকে দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘুম থেকে জেগে মা-বাবা দেখতে পান, বিছানায় শিশু আবদুল্লাহ নেই। তাঁদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও নেই। তাঁরা দেখতে পান বাড়ির জানালার গ্রিল ভাঙা ও দরজা খোলা রয়েছে। ঘরের অন্যান্য রুমের সব দরজা বাইরে থেকে আটকে রেখেছে দুর্বৃত্তরা। শিশুটিকে কীভাবে অপহরণকারীরা নিয়ে গেছে, তা কেউ বুঝতে না পেরে পুলিশে খবর দেয়।
ওই দিনই অপহৃত শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মোরেলগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত অপহরণকারীদের নামে মামলা করেন। পরে শিশুটির মুক্তির জন্য মোবাইল ফোনে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। যে মোবাইল ফোন থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তার সূত্র ধরে শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান শুরু করে।
এই সময়ের মধ্যে শিশুটিকে ফিরে পেতে বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম অপহরণকারীদের চাহিদা মতো ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণও দেন। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে একটি মোটরসাইকেল ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। সেই মোটরসাইকেল ও ঘর থেকে চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে প্রধান আসামি মো. হৃদয় ওরফে রাহাত হাওলাদারসহ অন্য আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
এ ঘটনার সাত দিন পর প্রধান আসামি মো. হৃদয়ের কথা মতো মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকার একটি মৎস্য খামারের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তিন আসামিই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোরেলগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল মতি দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছরের ৫ অক্টোবর প্রধান আসামি মো. হৃদয়সহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চলতি বছরের ৯ মার্চ আদালত মামলাটির অভিযোগ গঠন করেন। পরে বিষয়টি করোনা পরিস্থিতির কারণে স্থগিত থাকে। এরপর চলতি মাসের ১১ তারিখ পুনরায় কার্যক্রম শুরু করা হয়।
এই মামলায় আট কার্যদিবসের মধ্যে ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
মামলার বাদী শিশুটির বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম সোহাগ, মা রেশমা বেগম ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রণজিৎ কুমার মণ্ডল এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তবে, আসামিপক্ষের কৌঁসুলি মো. এনামুল হেসেন জানান, তাঁর মক্কেল আদালতে ন্যায়বিচার পাননি। সে কারণে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি।