মেডিকেলে ভর্তির ফল বাতিল চেয়ে রিট
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফল বাতিল করে নতুন মেধা তালিকা প্রণয়ন করে মেডিকেল কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। ফেরদাউস জাহান মারিয়াসহ ৩২৪ পরীক্ষার্থীর পক্ষে আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব এ রিট দায়ের করেন।
রিটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়, গত ৪ এপ্রিল প্রকাশিত ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে অসংখ্য ভুল এবং বড় ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক গত ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রচারিত ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী একজন পরীক্ষার্থী কোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি যদি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তবে তার মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে সাতে সাত নম্বর কর্তন করা হবে। আবার কোনো পরীক্ষার্থী যদি গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকে তাহলে তার পাঁচ নম্বর কাটা যাবে। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফল থেকে দেখা যায়, অনেক পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এই নিয়মটি পালন করা হয়নি। যেসব পরীক্ষার্থীর সাড়ে সাত নম্বর কর্তন করার কথা সেখানে মাত্র পাঁচ নম্বর কর্তন করা হয়েছে। ফলে ওইসব ভর্তি পরীক্ষার্থীদের আড়াই নম্বর বেশি দিয়ে মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
রিটে আরও বলা হয়, আবার প্রথমবার পরীক্ষায় যেখানে কোনো নম্বর কাটবার কথা নয়, সেখানে অনেক পরীক্ষার্থীদের থেকে পাঁচ নম্বর কর্তন করে মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী অন্তত দুটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর ছিল দুটি করে। সেই সঙ্গে অন্তত তিনটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর ছিল না। সংরক্ষিত জেলা ও উপজাতি কোটার আসন পূরণেও ব্যাপক অসঙ্গতি করা হয়েছে। ঢাকা জেলার কোটা আবেদনকারী পরীক্ষার্থীকে দেখানো হয়েছে মেহেরপুর জেলার পরীক্ষার্থী হিসেবে। উপজাতি কোটায় সংরক্ষিত আসনে অসংখ্য সাধারণ ছাত্রছাত্রীকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
রিটে বলা হয়, এসব ত্রুটি ও অসঙ্গতি রেখে মেধাতালিকা প্রণয়ন করার ফলে হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী পরীক্ষার্থী মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার মুখে পড়েছেন। এসব কারণে প্রকাশিত ফলাফল বাতিল করে এবং এসব ত্রুটি ও অসঙ্গতি সংশোধন করে নতুন মেধাতালিকা প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বরং ত্রুটিপূর্ণ মেধাতালিকার ভিত্তিতেই মেডিকেল কলেজগুলোতে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে আগামী ২২ মে থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।
রিট আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ মেধাতালিকার ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অর্থই হলো প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করা। তাদের আজীবন লালিত আকাঙ্ক্ষা চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত করা। সেই সঙ্গে দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া, যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ৩১, ৩২ ও ৪০ ধারার পরিপন্থি।
এর আগে এক আইনি নোটিশে তিনদিনের মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ত্রুটিপূর্ণ মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা এবং ত্রুটিপূর্ণ মেধাতালিকা বাতিল করে ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণ করে নতুন মেধাতালিকা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পাওয়ায় রিট দায়ের করা হয়েছে।