ময়মনসিংহে করোনা রোগী বাড়ছে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের তাগিদ

ময়মনসিংহে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন প্রতিরোধ করতে হলে সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। পিসিআর মেশিন ও ল্যাব সুবিধা বাড়াতে হবে। কেননা একটি করোনা টেস্ট ল্যাব দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক।
জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মশিউল আলম বলেন, জেলায় এক হাজার ২০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০৮ জন পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ২৯ জন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনিশিয়ান ও নার্সসহ আক্রান্ত ৫০ জন। বাকিরা সাধারণ জনগণ। চিকিৎসকদের মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১ জনসহ করোনা পরীক্ষা ল্যাব টেকনিশিয়ান রয়েছেন চারজন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, করোনা টেস্টের প্রধান সমস্যা একটি মাত্র পিসিআর ল্যাব। আরেকটি পিসিআর মেশিন থাকলেও এখনো কারিগরি ও অবকাঠামোগত সমস্যার জন্য সেটি চালু করা যায়নি। ফলে একটি পিসিআর মেশিনে তিন শিফটে রাত দিন কাজ করছেন চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানরা। এর ফলে এখনো ৭০০ নমুনা পরীক্ষাগারেই পড়ে আছে।
উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, এ পর্যন্ত নেত্রকোনা জেলা থেকে এক হাজার ২৯টি নমুনা করা হলেও টেস্ট রিপোর্ট হয়েছে ৪১৯ জনের। এতে পজেটিভ হয়েছেন ৩৩ জন। বাকি নমুনা এখনো টেস্ট করাই সম্ভব হয়নি।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে করোনার নমুনা তিন দিন পর নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পিসিআর ল্যাবে অপরীক্ষিত নমুনার জন্য প্রয়োজীয় তাপমাত্রার একটি রেফ্রিজারেটর দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০৬ জন চিকিৎসক, ৭৭৬ জন নার্স ও ৮০০ জন স্টাফ রয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। করোনা গোপন করে চিকিৎসা গ্রহণ এবং ল্যাবে কর্মরত টেকনিশিয়ান ও টেস্টে পজিটিভ রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন তাতে সামনের দিনগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাবে। এরমধ্যে চিকিৎসকদের “এন-নাইটি” সুরক্ষা মাস্কের সরবরাহ বন্ধ। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন সবাই।
পরিচালক বলেন, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের ১০ দিনের ডিউটি শেষে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। তবে বাসায় নয়, তাদের একটি রিসোর্টে থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে এসকে হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও একটি হোটেলে রাখা হচ্ছে। তারা ডিউটি শেষে হোটেলেই ফিরছেন, বাসায় নয়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়জনের গ্রুপ করে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। কেউ আক্রান্ত হলে তারা হোম কোয়ারেন্টিতে যাচ্ছেন, অন্য গ্রুপ কাজ শুরু করছে।
ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, অপরীক্ষিত নমুনা যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সঠিক তাপমাত্রা সংরক্ষণ করে এমন একটি ফ্রিজ দেওয়া হবে ল্যাবে। ময়মনসিংহে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
ময়মনসিংহ করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য পুলিশ সুপার আহমারুজ্জামান বলেছেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ জনকে ঘরে রাখা অনেক কঠিন।
ময়মনসিংহে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো মিজানুর রহমান বলেছেন, এসকে হাসপাতালের পাশাপাশি ময়মনসিংহ নার্সেস ইনস্টিটিউটের একটি ডরমেটরিকে করোনার ডেডিকেটেড হাসপাতালের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে প্রায় ১২০ জন করোনা রোগীকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। এতে সংক্রমণ ঝুঁকি কিছু কমবে। অন্য দিকে এসকে হাসপাতালে ভেন্টিলেশনসহ পাঁচটি কক্ষ করা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বিনা প্রয়োজনে বাসা থেকে বের না হতে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে চলাফেরা করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।