‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমন প্রতিবেদন আশা করেনি সরকার’
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতিতে সরকারের দায়মুক্তি দেওয়া এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের নাগরিকদের দমন পীড়নের অভিযোগ তুলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ‘বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন’ প্রকাশ করেছে, সেটিকে অনাকাঙ্খিত ও ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে এমন প্রতিবেদন সরকার আশা করেনি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রতিবেদনটির বিষয়ে আজ রোববার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উচ্চ আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি। এ অবস্থায় বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে আমাদের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে, এমন পদক্ষেপ আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা এটা আশাও করছি না।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত ১৩ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ নিয়ে ৭৪ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর আগেও আমি এ বিষয়ে কিছু কথা বলেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিবেদনের প্রতিটি দিক নিয়ে আমরা যুক্ত রাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কথা বলবো ও আলোচনা করবো।’
শাহরিয়ার আলম প্রতিবেদনের কয়েকটি দিক তুলে ধরে বলেন, ‘এ প্রতিবেদনটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও মননশীলতার সঙ্গে বেমানান। যেমন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলজিবিটিদের (লেসবিয়ান, সমকামী, রূপান্তরকামী) জন্য বাংলাদেশে আইন নেই এবং বাংলাদেশ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না—এমন কথাও বলা হয়েছে। অথচ এলজিবিটি আমাদের ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী। পৃথিবীর এমন একটা মুসলিম দেশ নেই, যেখানে এলজিবিটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়। আমার জানামতে, কোনো ধর্মই এটি অনুমোদন দেয়নি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যত দেশ বা সংস্থা থেকে চাপ আসুক না কেন, এলজিবিটি প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে, ধর্মের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বিষয়েও ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। ১০ থেকে ১২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে পালানোর সময় নৌকাডুবিতে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এটাও কি আমাদের দোষ? আমাদের ঘাড়ে এ দোষ চাপানো হয়েছে। অথচ রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি মানবিক।’
‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সাজা দেওয়া হয়েছে’ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘প্রতিবেদনের এ তথ্যও সঠিক নয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে নির্বাহী আদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে দেশে ও বিদেশে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিবেদনটি ওই সব তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা গতানুগতিক একটি প্রতিবেদন।’
গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায়নের সময়সীমায় বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবি করা হয়েছে। এগুলো হলো—বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বেআইনি বা নির্বিচারে হত্যা, গুম, সরকারের পক্ষ থেকে বা তার এজেন্টদের দ্বারা নাগরিকদের নির্যাতন, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তির নির্যাতন বা মামলা, কারাগারে জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পরিবেশ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক, রাজনৈতিক বন্দি, অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশপ্রণোদিত প্রতিশোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বাধা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর স্বেচ্ছাচারি বা বেআইনি হস্তক্ষেপ, একজন ব্যক্তির দ্বারা অভিযুক্ত অপরাধের জন্য পরিবারের সদস্যদের শাস্তি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, সাংবাদিকদের অযৌক্তিক গ্রেপ্তার বা বিচার, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, ইন্টারনেট স্বাধীনতার উপর গুরুতর নিষেধাজ্ঞা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং সমিতির স্বাধীনতার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে সংগঠন, তহবিল বা বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধমূলক আইন।