রাজশাহী রেড জোনে, এখনই হচ্ছে না লকডাউন

রাজশাহীতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে রাজশাহী মহানগরীতে করোনা এখন লাগামহীন। ফলে নগরীসহ জেলার সব এলাকা এখন রেড জোনের ভেতরে চলে গেছে। তবে লকডাউনের মতো কোনো সিদ্ধান্ত এখনই আসছে না।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক জানান, রাজশাহীতে জনসংখ্যা ৩০ লাখ। আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮৯ জন। জোন ঘোষণার শর্ত অনুযায়ী, জেলা ও মহানগরের সব এলাকা এখন রেড জোনে। কিন্তু লকডাউনের শর্ত ভিন্ন। যার কারণে, রাজশাহীর কোনো এলাকায় আপাতত লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে না।
সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, আজ সকাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা ও মহানগরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮৯ জন। এর মধ্যে ৭২৬ জনই শনাক্ত হয়েছেন রাজশাহী মহানগর এলাকায়। এ ছাড়া জেলার বাঘা উপজেলায় ২০ জন, চারঘাটে ৩০ জন, পুঠিয়ায় ১৪ জন, দুর্গাপুরে ১২ জন, বাগমারায় ৩১ জন, মোহনপুরে ৪২ জন, তানোরে ৩৭ জন, পবায় ৬৭ ও গোদাগাড়ীতে ১০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
রাজশাহীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মহানগরেই প্রাণ গেছে ছয়জনের। এর বাইরে বাঘা, চারঘাট, পবা ও মোহনপুরে একজন করে মারা গেছেন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় বলছে, রাজশাহীতে করোনা থেকে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৪৫ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ৮৩৪ জন। এর মধ্যে নগরেই চিকিৎসাধীন ৬৬৫ জন। গ্রামের চেয়ে শহরে সংক্রমণের হার অনেক বেশি।
এর কারণ জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, ‘শহরে সংক্রমণ বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে আমি মনে করি, দেরিতে পরীক্ষা শুরু করা। রাজশাহীতে ল্যাব চালুর পর প্রথমে উপজেলাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেই তুলনায় শহরের নমুনার পরীক্ষা হয়েছে কম। তখনই করোনা শহরে বিস্তার লাভ করেছে। শহরে সংক্রমণ বেশি হওয়ার অন্য কোনো কারণ আমি আপাতত দেখি না।’
লকডাউনের চিন্তাভাবনা আছে কি না—এমন প্রশ্নে ডা. এনামুল বলেন, ‘একবার তো লকডাউন হলো নামমাত্র। সেই লকডাউন দিয়ে তো কোনো লাভ নেই। লকডাউন দিলে এবার কঠোরভাবে দিতে হবে। সেটা পুরো এলাকার জন্য সম্ভব না। আমরা এভাবে এগোচ্ছি যে, একটি বাড়িতে করোনা রোগী শনাক্ত হলে সেটিসহ তার আশপাশের আরো কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা। অথবা কোনো মহল্লায় কয়েকটি বাড়িতে করোনা রোগী পাওয়া গেলে সে মহল্লাটিই লকডাউন করা। কিন্তু পুরো শহর লকডাউন করা সম্ভব না।’
সামনে কোরবানির ঈদ হওয়ায় পশুর হাট থেকে করোনার বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, ‘সেটা তো আছেই। কিন্তু গরু-ছাগলের হাটের চেয়েও ভয়ংকর সাহেববাজারের হাট। সেই হাট বন্ধ করবে কে? সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাহেববাজারে যে হাট বসছে, সেটিই তো আমাদের ঝুঁকিতে ফেলছে। সাধারণ মানুষকে বলব, সচেতন হতে হবে। এখন হাটে-বাজারে যাবেন না। তাহলে আমরা ভালো থাকতে পারব। তা না হলে একে-অপরের জন্য দোয়া করা ছাড়া কিছু করার থাকবে না।’
শহরের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘প্রশাসনকে আমি লকডাউনের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন সেই পথে এগোচ্ছে না। এখন আমি সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে বসব। তারপর আমরাই একটা সিদ্ধান্ত নেব।’