রাসিকে ১৭০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/06/16/rajshahi-budget-photo.jpg)
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আয় ও ব্যয় সমান ধরে এক হাজার ৭০০ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩২৩ টাকার এই বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন, সড়ক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে, কোনো কর বাড়ানো হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের সভা কক্ষে সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এ বাজেট ঘোষণা করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটকে উন্নয়নমুখী জানিয়ে মেয়র লিটন বলেন, ‘নতুন বাজেটে নগরীতে ৮০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো কর বাড়ানো হয়নি। শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন, সড়ক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নকে প্রস্তাবিত বাজেটে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।’
মেয়র লিটন আরও বলেন, ‘নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাজেটে ডেঙ্গু ও পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে মশকনিধন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
মেয়র বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে বহুতল ভবন নির্মাণ কর আরোপের মাধ্যমে নগরীতে ভবন নির্মাণের আগে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার বিধান কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। এতে একদিকে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে নগরীতে বহুতল ভবন নির্মাণে শৃঙ্খলা আসবে।’
মেয়র বলেন, ‘শক্তহাতে করোনার প্রভাব মোকাবিলা করার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যখন পুরো বিশ্বকে অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে, তখনও বিদায়ী অর্থবছরে রাসিকের এক হাজার ৮০ কোটি টাকার বাজেটের বাস্তবায়নের হার ৭১ শতাংশ, যা এর আগে কখনও হয়নি।’
মেয়র লিটন বলেন, ‘বর্তমানে মহানগরজুড়ে যে পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে, তার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে রাজশাহী মহানগরীকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য, আধুনিক, কর্মচঞ্চল ও আলো ঝলমলে মহানগরীতে পরিণত করা। যার অনেকটাই বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামীতে রাজশাহী মহানগরীকে শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম মডেল মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
বাজেট ঘোষণাকালে মেয়র গত অর্থবছরে সমাপ্ত উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকল্প তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৬৪ কোটি ১৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়েনগরীর আলুপট্টি মোড় হতে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করে চারলেনে উন্নীতকরণ, সড়কের উভয় পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ, দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি স্থাপন ও আইল্যান্ডে বৃক্ষরোপণ। ১৮৯ কোটি ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় হতে ছোট বনগ্রাম, মেহেরচণ্ডী বুধপাড়া, মোহনপুর, চৌদ্দপায়া হয়ে রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ।
প্রকল্পের আওতায় পূর্ব-পশ্চিমমুখী ছয় দশমিক ৭৯৩ কিলোমিটার চার লেন সংযোগ সড়ক নির্মাণ, দুই পাশে ফুটপথ, রেলওয়ে ক্রসিংয়ে একটি ফ্লাইওভার, একটি সেতু, আটটি কালভার্ট ও ট্রাফিক কাঠামো নির্মাণ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় নগরীর ক্রমবর্ধমান যানজট পরিস্থিতি নিরসনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধনের পাশাপাশি আবাসনসহ আর্থ-সামাজিক ও পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ১২৬ কোটি ৩৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে উপশহর মোড় হতে দড়িখরবোনা, কাদিরগঞ্জ, মহিলা কলেজ, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি হয়ে সোনাদীঘি মোড় এবং মালোপাড়া মোড় থেকে রাণীবাজার মোড় হয়ে সাগরপাড়া বটতলা মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ওয়ার্ডগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন কার্পেটিং সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিলসিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা সড়ক ফোরলেনে উন্নীত করা হয়েছে, সঙ্গে ড্রেন, ফুটপাত ও বাইসাইকেল লেন নির্মিত হয়েছে। সড়কটিতে দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। ৪৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর ওয়ার্ডগুলোর প্রান্তিক এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কার্পেটিং, সিসি ও নর্দমা নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
এ ছাড়া সোনাদীঘি মোড় থেকে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপথ নির্মাণ, প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে।
১৯৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ছয় দশমিক ৩৬ কিলোমিটার প্রাইমারি, ১৯ দশমিক ২৯ কিলোমিটার সেকেন্ডারি এবং ৬৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার টারশিয়ারি নর্দমা নির্মিত হয়েছে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে নর্দমার কাদামাটি অপসারণে নয়টি প্রাইমারি নর্দমার পাশে মোট আট দশমিক ৬৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় নির্মিত নর্দমাগুলোয় মহানগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
বাজেট ঘোষণাকালে মেয়র লিটন নগরীর চলমান উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে বলেন, ‘দুই হাজার ৯৩১ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ২১৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এক হাজার ৪০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় চলমান কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি ৫৫ ভাগ। প্রকল্পের আওতায় নগরীর যানজট নিরসনে ভদ্রা, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর, বর্ণালী, নতুন বিলসিমলা, বহরমপুর, রাজশাহী কোর্ট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিংয়ে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণের নকশা প্রণয়নের কাজ শেষে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’