শঙ্কা নিয়ে রাজধানী ফিরেছে চেনা রূপে
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। মানুষজন রাস্তায় নেমেছে, গণপরিবহণ চলাচল শুরু হয়েছে। যেন শহর তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। রাজধানী ফিরেছে তার চেনা রূপে।
এখন মানুষ প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে কমই দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগের মুখে মাস্ক থাকলেও, তা যথাযথভাবে পরিধান করছেন না অনেকে।
রাজধানীর সড়কে মানুষ ও যানবাহন বেড়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে যানজট। রাস্তায় মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হচ্ছে মানুষকে। বাসে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী অর্ধেক আসনে যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রী ওঠাতে দেখা গেছে।
এখন আর অযাচিত চলাচলের জন্য কাউকে মামলার জালে জড়াতে হবে না। গুনতে হবে না জরিমানা। অথচ, গতকাল বুধবার পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ রোধে রাজধানীসহ সারা দেশে দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছিল সরকার। ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত জারি থাকা এ বিধিনিষেধের মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশ অকারণে বাইরে বের হওয়ায় নয় হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করে।
এই ১৪ দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই হাজার ৯৯৯ জনের কাছ থেকে ৩৯ লাখ ১২ হাজার ৩৩০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। এ ছাড়া ট্রাফিক পুলিশ অপ্রয়োজনে বের হওয়া আট হাজার ১৩৯টি গাড়িকে মোট এক কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭৫ টাকা জরিমানা করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে আর সাধারণ মানুষকে সেসব ভয় করে রাস্তায় বের হতে হবে না। তবে সরকার বলছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল ও ঈদের কেনাকাটা করতে। যদিও এর আগেও যতবার লকডাউন বা বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছিল, ততবারই সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরতে বলেছিল। কিন্তু, মাঠের পরিবেশ দেখা গেছে ভিন্ন। মানুষজনকে অকারণে বাইরে বের হতে দেখা গেছে। জোর করার পরও মাস্ক পরতে অনীহা দেখা গেছে মানুষের মধ্যে।
তবে এই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ হিসেবে দেখছেন জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলছিলেন, ‘আমি জানি না, সরকার কেন বিধিনিষেধ শিথিলের পথে হাঁটল। আমাদের দেশের মানুষ মোটেই সচেতন নয়। ফলে ছাড় দিলেই বিপদ।’
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এখন মানুষজন কেনাকাটা করতে মার্কেটে যাবে। সেখান থেকে করোনা নিয়ে ঘরে ঢুকবে। ঘরে আক্রান্ত করার পরও আবার গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যাবে। সেখানে গিয়ে মানুষজনকে আক্রান্ত করবে। এই তো, এভোবেই চলতে থাকবে আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি। সরকারের এখন আরও কঠোর হওয়ার দরকার। নতুবা করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভুগতে হবে সারা জাতিকে।’