শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আইডিইবির ১১ দফা দাবি

দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কাজের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) সিলেট জেলা শাখা। গতকাল সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
গণপ্রকৌশল দিবস ও আইডিইবির ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সিলেট মহানগরে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ওই শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইডিইবির সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মো. নজরুল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দীন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় চলতি বছর গণপ্রকৌশল দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘লার্নিং বাই ডুয়িং হোক শিক্ষার ভিত্তি।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি দেশের সমগ্র প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষার মূল দর্শন হওয়া উচিত লার্নিং বাই ডুয়িং। সেই ভাবনা থেকে আমাদের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গণপ্রকৌশল দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে লার্নিং বাই ডুয়িং হোক শিক্ষার ভিত্তি।’
শিক্ষাক্ষেত্রে সংষ্কার প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘দক্ষতার এ সর্বজনীনতা গড়ে তোলার জন্য বিদ্যমান জীবনচর্চার সাথে দক্ষতা চর্চার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। এরজন্য ব্যক্তির দায়বদ্ধতা, কর্মকৌশলের নৈপুন্যতা অর্জন ও যথাযথ প্রায়োগিক মানসিকতা সৃষ্টি, সম্পদের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা, দায় এড়ানো নয় দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’
সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
১. দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘লার্নিং বাই ডুয়িং হোক শিক্ষার ভিত্তি’ পদ্ধতি প্রবর্তন করে কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
২. দেশের সব শিক্ষা ব্যবস্থায় জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক কারিকুলাম তথা সফট স্কিল এবং টেকনিক্যাল স্কিল সম্পৃক্ত কারিকুলাম প্রবর্তন করা।
৩. দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ১০০ নম্বরের একটি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক বিষয় ২০২১ সাল থেকে চালু করার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাব/ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে ন্যূনতম একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে কোর্স শুরু করা।
৪. জব মার্কেটের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করা।
৫. সব মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসায় ২০২১ সালের মধ্যে এসএসসি (ভোক) কোর্স প্রবর্তন করা।
৬. উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ন্যূনতম দুইটি টেকনোলজিতে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করা এবং দ্বাদশ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ন্যুনতম একটি ট্রেডে দক্ষতা সনদ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
৭. দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক পুনর্গঠনসহ ‘ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক’কে বেইজ ধরে ‘বাংলাদেশ কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক’ প্রথা চালু করে বিশ্বমানের শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা।
৮. উন্নত ও অগ্রসরমান বিশ্বের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় দেশে আন্তর্জাতিকমানের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে বৈশ্বিক চাহিদার প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৯. উন্নত বিশ্বের ন্যায় দেশের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর হার ৫০-৬০ ভাগে উন্নীত করা এবং মধ্যম স্তরের কারিগরি শিক্ষাকে ৪০-৪৫ ভাগে উন্নীত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে শিক্ষার মূল স্রোতধারায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে নিয়ে আসা।
১০. কাজ ও কাজের মানুষকে সম্মান করা এবং যথাযথ পারিশ্রমিক নিশ্চিত করে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১১. সব সংস্থায় চাকরির অর্গানোগ্রাম বিজ্ঞানভিত্তিক, ইঞ্জিনিয়ারিং টিম কনসেপ্ট অনুসরণপূর্বক জনগণ ও সংস্থার জন্য কল্যাণকর ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগে ১:৫ হিসেবে পদ সৃষ্টি করা।