সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ হলে সমাজে অকল্যাণ বয়ে আনে

সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ। তাই তাদের মধ্যে কোনো বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি হলে এতে একদিকে তাদের পেশাগত যেমন সমস্যা হয়, তেমনি সমাজের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে। তাই সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে কোনো বিভেদ ও অনৈক্য কাম্য নয়।
মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন, খুলনার নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে দৌলতপুরের রফিউল ইসলাম টুটুলের দায়ের করা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে শ্রম আদালত খুলনার চেয়ারম্যান এবং জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ আরাফাত হোসেন এ কথা উল্লেখ করেন। সাড়ে ছয় বছর ধরে মামলার বিচারকাজ শেষে বাদীর আবেদন খারিজ করে নির্বাচিত কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের আদেশ দিয়েছেন তিনি।
শ্রম আদালতের রেজিস্ট্রারে গতকাল বুধবার স্বাক্ষর করা রায়ের কপি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৮ জুন তারিখের নির্বাচন অকার্যকর, বেআইনি এবং ২২ জন ভোটার তালিকাভুক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন রফিউল ইসলাম টুটুল। এই মামলায় মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন, খুলনার সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রবীণ সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমানসহ পাঁচজনকে বিবাদী করে মামলাটি দায়ের করা হয়।
দীর্ঘ শুনানি শেষে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৈয়দ আরাফাত হোসেন দীর্ঘ পর্যবেক্ষণসহ সাত পৃষ্ঠার কম্পিউটার টাইপ করা রায় গত ২২ ডিসেম্বর বিকেলে ঘোষণা করেন।
রায়ের আদেশে বিচারক বলেন, অত্র মামলাটি দোতরফা সূত্রে নামঞ্জুরভাবে খারিজ করা হলো। এতদ্বারা মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন, খুলনার (রেজিস্ট্রেশন : ১০৬৭) কার্যকরী কমিটির নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের ২৩(ঙ) ধারার বিধান অনুযায়ী অত্র রায়ের পর্যবেক্ষণের আলোকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিটি গঠন করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে বিধিবিধান মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেওয়া গেল। এ বিষয় সার্বিক তত্ত্বাবধান ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পরিচালক ও রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রম অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া গেল।’
রায়ে বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন উল্লেখ করেন যে নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২৮/০৬/২০১৪ তারিখের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। প্রতিপক্ষ দাবি করে যে কার্যনির্বাহী কমিটির উক্ত নির্বাচন বাতিল হলে ট্রেড ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র শূন্যতার মধ্যে পড়বে এবং উক্ত কমিটির আর্থিক ও প্রশাসনিক বিষয় বিভিন্ন সময় যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তা সম্পর্কে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হবে।
বিচারক আরো বলেন, নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সাংবাদিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অধীনস্থ হলেও এটি নিয়ে যুক্তিতর্কের শুনানিকালে উভয়পক্ষের মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ। তাই তাদের মধ্যে কোনো বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি হলে এতে পেশাগত যেমন সমস্যা হবে তেমনি সমাজের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে। তাই সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে কোনো বিভেদ ও অনৈক্য কারোই কাম্য নয়।
এই রায়ের ফলে ২০১৪ সালের ২৮ জুন নির্বাচিত কমিটি সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন (মৃত্যুবরণ করায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিয়ার রহমান) ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লার কমিটি বৈধ বলে বিবেচিত হলো। একইভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মোতাহার রহমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা সঠিক বলে বিবেচিত হলো। আতিয়ার-হাসান মোল্লার কার্যকরী পরিষদ আদালতের আদেশ মোতাবেক ৬০ দিনের ভেতরে নতুন নির্বাচন দেবে।