সুনামগঞ্জে হামলার ঘটনায় মামলা, দেড় হাজার আসামি

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় দেড় হাজার অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে শাল্লা থানায় মামলাটি করা হয়। মামলায় ৫০ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে।
শাল্লা থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সাদরুল হাসান খান রাত সাড়ে ৮টার দিকে এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হামলার ঘটনায় গ্রামবাসীর পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। মামলায় এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারনামীয় আসামি আছেন ৫০ জন। মামলার বাদী এজাহারনামীয় আসামিদের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না।’
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, ‘শুনেছি, পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি বলে আমি জানি।’
এ মামলার ঘটনার তথ্য জানতে চেয়ে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
পরে যোগাযোগ করা হয় সুনামগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় হবিবপুর ইউপির চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল মামলাটি করেছেন কিনা। এ প্রশ্নে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলার বাদীর নাম জানাটা কি খুব জরুরি?’
এরপর এসপির কাছে প্রশ্ন করা হয়, পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে কিনা। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন তাই।’
মামলার বিষয়ে জানতে বাদী বিবেকানন্দ মজুমদার বকুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
তবে এনটিভির সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী জানিয়েছেন, একই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন।
এর আগে আজ রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ সম্প্রীতি যারা বিনষ্ট করার চেষ্টা করবে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘সুনামগঞ্জে কয়েকটি পরিবারের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। মামলা নিজস্ব গতিতে চলবে। এ ঘটনায় যারা উসকানি দিয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।’
দেশের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশ আমাদের সবার। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ এখানে সমান অধিকার ভোগ করছে। সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। এদেশে কাউকে এ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ক্ষুণ্ন করতে দেওয়া হবে না।’
শাল্লা থানার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় শানে রিসালাত সম্মেলনে লক্ষাধিক মানুষের সামনে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেই সূত্র ধরে পাশের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের ঝুমন দাস আপন তাঁর ফেসবুকে মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেন। একপর্যায়ে ঝুমনকে খুঁজে বের করে মঙ্গলবার রাতে তাকে পুলিশে দেয় লোকজন। এরপরও লোকজন শান্ত না হয়ে বুধবার সকাল থেকে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রাম ঘিরে রাখে। পরে তারা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ১০-১২টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে।