স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ধরা মৃত্যুদণ্ডের আসামি

মানিকগঞ্জের মৃত্যুদণ্ডের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। গতকাল সোমবার দিনগত রাতে জেলার ঘিওর থানার বড়টিয়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই আসামির নাম শাহিন আলমকে (৩৮)। সাটুরিয়া থানায় শহিদুল ইসলামকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেল হক বলেন, ভুক্তভোগী শহিদুল ও আসামি শাহিন ছিলেন দুই বন্ধু। ২০০১-এ আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে তাঁদের বন্ধুত্ব হয়। ২০০৪ সালে তাঁরা ধামরাই থানার গোয়াড়ীপাড়ায় ‘বাংলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি সঞ্চয় ও ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সঞ্চয়, ঋণদান এবং ফিক্সড ডিপোজিট কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন তাঁরা। দুজন সংস্থাটির সমান অংশীদার থাকলেও শহিদুল এনজিওটির কর্মচারী এবং সদস্যদের কাছে তাঁর কর্মদক্ষতা ও ভালো ব্যবহারের জন্য খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। প্রতিষ্ঠানে লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এক সময় তাঁদের অ্যাকাউন্টে সদস্যদের সঞ্চয়ের বেশ কিছু টাকা জমা হয়। সেই টাকা ও প্রতিষ্ঠানটির লোভে বন্ধু শহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহিন।
মোজাম্মেল হক আরও বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক ২০০৬ সালের ২০ মে শাহিনের জন্য পাত্রীর দেখতে যাওয়ার কথা বলে শহিদুলকে মাইক্রোবাসে তোলেন। পরে সন্ত্রাসী রাজা মিয়াসহ আসামি সাহেদ, কুদ্দুস, বিষ্ণু সুইপার রশি দিয়ে গলা পেঁচিয়ে, রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে ভিকটিম শহিদুলকে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে গলা কেটে দেহ থেকে শহিদুলের মাথা আলাদা করে ফেলেন।
র্যাবের অধিনায়ক বলেন, হত্যার পর মরদেহ গুম করে আলামত লোপাট করার পরিকল্পনা করেন আসামিরা। তাঁরা কালামপুর, সাটুরিয়া হয়ে নির্জনস্থান বেতুলিয়া ব্রিজের ঢালে দেহ ফেলে দেন। আর মাথা নাগরপুরে জগতলার খালের পাড়ে কাদামাটিতে পুঁতে রাখেন।
ওই হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর মাটি খুঁড়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার শহিদুলের মাথা ও দেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় সাটুরিয়া থানায় একটি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদেরকে আসামি করে সেদিনই একটি হত্যা মামলা করা হয়।
পরে শহিদুলের পরিবার তাঁর মরদেহ শনাক্ত করে। ওই ঘটনায় শাহিন ১০ বছর জেল খেটে ২০১৬ সালে জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। পরে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা এবং সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন আসামি শাহিন আলম ও সাহেদ এবং পলাতক আসামি রাজা মিয়া, কুদ্দুস, বিষ্ণু সুইপার, রহম আলী ড্রাইভার ও মাইক্রোবাসের মালিক সেলিমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়৷
আদালত দীর্ঘ বিচারকার্য পরিচালনা করে গত ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর শাহিনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আসামি সাহেদ, রাজা মিয়া, আব্দুল কুদ্দুস ও বিষ্ণু সুইপারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, এরপর আসামি শাহিন ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপনে চলে যান। এ সময় তিনি রংপুর, আশুলিয়া, পল্লবী, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় পেশা পরিবর্তন করে কখনও ফেরিওয়ালা, গার্মেন্টসের অপারেটর, রাজমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিক ও স্যানিটারি মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন।