হরতালের নামে নৈরাজ্য করলে পুলিশ প্রতিহত করবে : আইজিপি

হরতাল দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ‘হরতালের নামে কেউ নৈরাজ্য ও জানমালের ক্ষতি করলে পুলিশ পেশাদারি আচরণ করে তা প্রতিহত করবে। হরতাল-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শান্তিকামী মানুষ।’
আজ রোববার সকালে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৭তম ক্যাডেট সাব-ইনস্পেক্টরদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এ কথা বলেন।
দেশের প্রতিটি থানাকে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় পরিণত করা হবে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে এ দেশটি শান্তিময় ছিল, সব সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে সামাজিক স্থিতিশীলতা। আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীল পরিস্থিতিও এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। হরতালের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার এবং দৃঢ়। নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোরতম অবস্থান নেবে। কোনো ধরনের নৈরাজ্য করা, ভাঙচুর করা, কোনো গাড়িতে হাত দেওয়া অথবা কারো জানমালের ক্ষতি করলে পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে, আন্তরিকতার সঙ্গে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করবে এবং কঠোর অবস্থান নেবে।’
প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেয় এক হাজার ৭৫৯ জন শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক (এসআই)। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য ছয়টি ক্যাটাগরিতে পাঁচজনকে পুরষ্কৃত করেন আইজিপি। একইসঙ্গে আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে পুরষ্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
শপথ নেওয়া নতুন এসআইদের নিজ নিজ দায়িত্বে অবিচল থাকার নির্দেশ দিয়ে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা চাই দেশের প্রতিটি থানাকে মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গায় পরিণত করতে।’
আইজিপি আরো বলেন, ‘জঙ্গি, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। যারা অন্যায় করবে তাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। কিন্তু সাবধান, একটি নিরাপরাধ লোকও যেন অত্যাচারিত না হন।’
ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘জবাবদিহিতামূলক ও জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ হবে অনন্য দৃষ্টান্ত। বর্তমানে পুলিশ বাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, সন্ত্রাস দমন, মাদকের অপব্যবহার ও বিস্তার রোধে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব ও সাহসিকতা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অবদান বিশ্বে বাংলাদেশ মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।’
নতুন প্রযুক্তির বিকাশ ও বিশ্বায়নের সঙ্গে অপরাধের প্রকৃতি, মাত্রা ও অপরাধ সংগঠনের কৌশলে নিয়ত পরিবর্তন ঘটছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশকেও তাই অপরাধ মোকাবিলা, কলা-কৌশল প্রয়োগ এবং প্রযুক্তি ও লজিস্টিকস ব্যবহারে সক্ষমতা অর্জন করতে হচ্ছে। অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা থেকে শুরু করে পুলিশের প্রাত্যাহিক কাজের পরিসরে সাইবার ক্রাইম রোধ, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ, আন্তদেশীয় অপরাধ ব্যবস্থাপনা, জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন ইত্যাদি সংযোজিত হয়েছে। জনগণের সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার বিভিন্ন আইনকে সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযোগী করেছে।’
এ সময় জেন্ডার গাইডলাইন্স অনুসরণ, নারী সহায়তা কেন্দ্র, শিশু হেল্প ডেস্ক প্রবর্তন, ডিএমপিতে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সারা দেশে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা, পুলিশ বাহিনীতে ধারাবাহিকভাবে বর্ধিত হারে নারী সদস্য নিয়োগ, বাংলাদেশ পুলিশে কর্ম পরিবেশের উন্নয়ন, বেবি-ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং পুলিশ সদস্যদের আজীবন রেশনসহ বিভিন্ন সরকারের নেওয়া বিভিন্ন যুগোপযোগী ও ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন আইজিপি।
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল অতিরিক্ত আইজিপি মো. নজিবুর রহমান, রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) একেএম হাফিজ আক্তার, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির, রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।