৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অনড় চা শ্রমিকরা
মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা ১৭তম দিনেও ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অনড় রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও কাজে যোগ দেয়নি তারা। সাধারণ চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সরাসরি ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। না হলে তারা রুটি রুজির দাবিতে লাগাতার ধর্মঘট চালিয়ে যাবে।
আজ সকাল থেকে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে দেওরাছড়া চা বাগান, প্রেমনগর চা বাগান, মৌলভী চা বাগান, মাজদিহি চা বাগান ও হামিদিয়া চা বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা সদরের আসে। তারা মৌলভীবাজার শহরের ঢাকা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের বেরীরপাড় মোড়ে রাস্তায় বসে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিক্ষোভ পালন করেন। এ সময় সড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মজুরির দাবি আদায়ে জেলার ৯২টি বাগানে কাজে না গিয়ে বাগানের ভেতর বিক্ষোভ করেছে তারা। বিক্ষোভ করে সিলেট ও হবিগঞ্জের শ্রমিকরাও। পরে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বেরীরপাড় এলাকায় শ্রমিকদের মজুরির বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে বলেন, শ্রমিকদের ভেতর কিছু বাইরের লোক প্রবেশ করে তাদের আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রধানমন্ত্রী খুব দ্রুত শ্রমিকদের মজুরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এর কিছু পর শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিয়ে বিকেল ৫টায় মিছিল সহকারে শাহ্ মোস্তফা সড়ক হয়ে বাগানে চলে যায়।
কয়েকটি বৈঠকের পর চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা চলমান আন্দোলনের বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত দাবি আদায় করতে না পারায় এখন তাদের উপর ক্ষুব্ধ সাধারণ শ্রমিকরা। তারা বলছে, দাবি আদায়ের এই আন্দোলন তারা চালিয়ে যাবে। নেতারা তাদের প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে বার বার প্রতারণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে তারা মজুরির বিষয়ে সরাসরি কিছু শুনতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা পেলেই তারা কাজে যোগ দেবে।
শ্রমিকরা বলেন, ১২০ টাকা দিয়ে এখন আর সংসার চলে না। তাই আমরা নিজেকে বাঁচাতে নিজেদের সন্তান ও পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে কাজ ছেড়ে রাস্তায় নেমেছি। না খেয়ে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হলে আমরা রাস্তায়ই মরব।
সাধারণ শ্রমিক রনি আহমদ, সুবোদ কুর্মী, জিমা উরাং, অমিতা রায় জানান, তারা না খেয়ে ধুকে ধুকে আর মরতে চান না। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ৩০০ টাকা মজুরি দেবে নইলে বুকে গুলি মারবে।
এদিকে শ্রমিকরা যাতে কাজে যোগ দেন এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ বিভিন্ন বাগানে গিয়ে পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে কাজে যোগদানের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট থেকে শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ধর্মঘটে নামে। দুই দফা মজুরি বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হলে তা শ্রমিকরা প্রত্যাখ্যান করে। দাবি না মানায় চা শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধারাবাহিক ধর্মঘট পালন করে যাচ্ছে।