৪ বছর ধরে শতাধিক গরিবের চাল আত্মসাৎ

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তিনজন ডিলারের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ তিনজন ডিলার অনিয়মের মাধ্যমে শতাধিক হতদরিদ্রের ১০ টাকা কেজির বরাদ্দকৃত চাল প্রায় চার বছর ধরে আত্মসাৎ করে আসছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন গত ৪ মে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ পারভেজ, সদস্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নন্দন কুমার দেবনাথ।
অভিযোগে জানা যায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় শতাধিক হতদরিদ্রর নাম থাকলেও তারা জানতেন না তাদের নামে কার্ড রয়েছে। তাই তাদের অজান্তেই তাদের বরাদ্দকৃত চাল প্রায় দীর্ঘ চার বছর ধরে আত্মসাৎ করে এলেও তা প্রকাশ পায়নি। সম্প্রতি দেশের করোনা পরিস্থিতিতে চাল বিতরণকালে উপকারভোগীদের নামের তালিকা ডিলারদের দোকানের সামনে টানিয়ে রাখতে বলা হয়। এই তালিকায় নিজেদের নাম দেখতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে যায় হতদরিদ্র শতাধিক মানুষ।
উপকারভোগীদের অভিযোগ, প্রায় দীর্ঘ চার বছর ধরে তালিকায় নাম থাকলেও তারা তা জানতেন না। স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যানরা তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়েছিলেন কিন্তু কখনও চাল দেননি। উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল মিয়ার স্ত্রী, তাঁর ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর নামেও কার্ড করা হয়েছে। এমনকি নিজের আত্মীয়-স্বজনদের নামে কার্ড করেছে। এতে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত অসহারা। এতে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মাওহা বড়ইকান্দা গ্রামের মৃত আবদুল মোতালিবের স্ত্রী ভিক্ষুক সুফিয়া খাতুন বলেন, 'আমার নামের চাল যারা চার বছর ধরে তুলে নিচ্ছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।'
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত ২৭ এপ্রিল তিনজন ডিলারকে অভিযুক্ত করে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছে বঞ্চিতরা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডিলার আব্দুল জব্বার, মাসুদ করিম রুবেল ও আজিজুল হক ইনসান বলেন, তাদের কাছে ৫০০ - ৬৮৩ জনের তালিকা রয়েছে। তারা তালিকা অনুযায়ী চাল দিয়েছেন। কেউ না পেয়ে থাকলে তাদের কিছু করার নেই। সবার মুখ চিনে চাল দেওয়া যায় না। যদি কোনো গোলমাল হয়ে থাকে তা বলতে পারবেন মেম্বার চেয়ারম্যানরা।
অভিযোগের বিষয়ে গৌরীপুরের ইউএনও সেঁজুতি ধর বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করলেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।