ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ভিটেমাটিছাড়া হাজারো পরিবার
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/05/27/photo-1432729378.jpg)
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে গত এক সপ্তাহে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার আটটি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের দুই পাশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাদের। ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীপারর মানুষজন ভাঙনের হাত থেকে ঘরবাড়ি সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এরই মধ্যে উপজেলার রমনা ইউনিয়নের টোনগ্রামের ২৫টি পরিবার, ব্যাপারীপাড়ার ৫০০, হিন্দুপাড়ার ২৫, মাস্টারপাড়ার ১০, মুদাফৎপাড়ার ৩০০, বাসন্তী গ্রামের ১০০, জোড়গাছ বাজার এলাকার ৭০টি ও ঝালোপাড়ার ৫০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে হিন্দুপাড়া, ব্যাপারীপাড়া ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে তীররক্ষা বাঁধ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের অবস্থান প্রায় ১২০ ফুট দূরে। প্রতিনিয়ত ভাঙন অব্যাহত থাকায় তা দিনে দিনে বাঁধের দিকে এগিয়ে আসছে। হিন্দুপাড়া এলাকায় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ভূষণ চন্দ্র বর্মণ, উজ্জ্বল চন্দ্র বর্মণ, সুভাস চন্দ্র বর্মণ, শান্তনা রানীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, বাঁধটি ভাঙলে পরিবার নিয়ে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবেন সেটা তাঁরা জানেন না।
এদিকে, জোড়গাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নদী এখন মাত্র ৭৫ ফুট দূরে অবস্থান করছে। ফলে ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে স্কুলটিও। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাছরিন আরা জানান, স্কুলভবন দুটি নদী ভাঙনের হুমকির মুখে থাকার বিষয়টি তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানালেও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. হবিবুর রহমান জানান, চিলমারী উপজেলায় বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে এগিয়ে চলছিল। প্রতিবছর পিএসসির ফলাফল অত্যন্ত ভালো করছিল। বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় ৩৫০ জন ছাত্রছাত্রী লেখা পড়া করছে। এমতাবস্থায় স্কুলভবনটি ভেঙে গেলে স্কুলকে কোথায় স্থানান্তর করবেন সে জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি হিন্দুপাড়া থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে গত এক সপ্তাহের নদীভাঙনে প্রায় ১২০ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে টোন গ্রাম থেকে জোড়গাছ বাজার পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার জায়গাজুড়ে নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও শতাধিক বসতভিটা।
ভাঙনকবলিত মানুষ জানায়, এ পর্যন্ত তাদের পুনর্বাসনে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না আসায় তারা চরম হতাশার মধ্যে রয়েছে।
এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসলাম মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নদীভাঙা পরিবারগুলোকে ত্রাণসহায়তা দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তিনি জানিয়েছেন। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান নদীভাঙনের কথা স্বীকার করে জানান, ‘আমরা ভাঙনকবলিত এলাকা রিপোর্ট করছি। দু-একদিনের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’