ঘরে ঘরে পিঠা, বাড়ি বাড়ি নিমন্ত্রণ

পিঠা-পায়েস খাওয়ার জন্য শীতকাল সব সময়ই বাঙালির প্রিয় সময়। এই সময়ই গ্রামে গ্রামে ধুম পড়ে পিঠা খাওয়ার।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গ্রামে গ্রামে চলছে শীতের পিঠা উৎসব। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলে এই উৎসব। উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করে জামাই দাওয়াত উৎসব। বাড়ি বাড়িতে দাওয়াত দেওয়া হয় মেয়ের জামাইদের। আর তাঁদের সৌজন্যে চলে পিঠা-পুলি বানানো।
খুব সকালে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা, সেই রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করা আর এই গুড় বিভিন্ন পিঠা-পায়েসের সঙ্গে ব্যবহার করেন স্থানীয়রা।
খোকসার পাইকপাড়া মির্জাপুর, জয়ন্তীহাজরা, জানিপুর, তাহেরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ বাড়িতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেড়াতে এসেছেন মেয়ে-জামাই ও তাঁদের ছেলেমেয়েরা। নতুন ধানের চাল ঢেঁকিতে গুঁড়ো করা হচ্ছে। সব বাড়িতে ঢেঁকি না থাকলেও যেসব বাড়িতে ঢেঁকি আছে সে বাড়িগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় করছেন গৃহিণীরা। অবশ্য ইদানীং বিদ্যুৎচালিত মেশিনেও চাল গুঁড়ো করা হয়ে থাকে। তবে স্থানীয়দের ভাষায়, ঢেঁকিতে গুঁড়ো করা চালের পিঠায় স্বাদ হয় অনেক বেশি।
পিঠা তৈরির সময় বাড়ির শিশু থেকে বৃদ্ধরা পর্যন্ত বসে থাকেন চুলার পাশে। গরম গরম পিঠা খেতেই আগ্রহ সবার। ধনী থেকে শুরু করে দরিদ্র সব বাড়িতেই চলে সাধ্যমতো পিঠা তৈরির উৎসব।
এসব পিঠার মধ্যে রয়েছে ভাপা, পাটিসাপটা, ঢাকুন পিঠা (সরা পিঠা), দুধপুলি, কুলসি পিঠা, পাকান পিঠা (তেলে ভাজা), হাতে কাটা সেমাই, নকশি পিঠা, ফুল পিঠা, কাটা পিঠা, মুঠো পিঠা ইত্যাদি।
এর মধ্যে ঢাকুন বা সরা পিঠা আবার খেজুরের গুড় আর দুধ দিয়ে সন্ধ্যায় ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া হয়।
জানিপুরের শিক্ষিকা ফারজানা আক্তার লাকী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিদ্যুৎচালিত মেশিনে গুঁড়ো করার চেয়ে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করে পিঠা তৈরি করলে সে পিঠা ভালো হয় এমনকি স্বাদও বেশি হয়।
প্রতি শীতে পিঠা বানানোটা একটা রেওয়াজের মতো এখানে, জানালেন গৃহিণী ফিরোজা খাতুন। বহু বছর ধরে মা-খালারা এই সংস্কৃতি পালন করছেন। তারই ধারাবাহিকতা তাঁরাও ধরে রেখেছেন বলে জানান তিনি।
শীতের সময় এলেই শীতের পিঠা খাওয়ানোর জন্য মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত দিয়ে আনতেই হবে বলে জানালেন দরিদ্র পরিবারের কিষানি জবেদা খাতুন। অর্থাৎ সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই এখানে প্রিয়জনদের নিয়ে পিঠা-পুলি খেতে ভালোবাসেন।
এমনকি এই সময়ে শহর থেকে আত্মীয়রাও গ্রামে ছুটে আসে এ পিঠা খাওয়ার উৎসবে যোগ দিতে।