জেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে টাকা ফেরত!
পঞ্চগড়ে টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চাওয়া প্রার্থীরা টাকা আদায় শুরু করেছেন। নির্বাচনের ভোটার যেসব জনপ্রতিনিধি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না তাঁদের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পঞ্চগড় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলার চাকলাহাট, হাড়িভাসা ও কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাধারণ ৫ নম্বর ওয়ার্ড।
এই ওয়ার্ডে সদস্য পদপ্রার্থী ছিলেন আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিক। তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁর ওয়ার্ডে ৩৯ জন ভোটার। তিনি ২৫ জনকে ২০ হাজার করে টাকা দিয়েছিলেন। বিপরীতে আরেক ধনাঢ্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাঁর চেয়েও বেশি টাকা দিয়েছেন। আর এ কারণেই নির্বাচনে তিনি মাত্র একটি ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচনের পর আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিকের সমর্থকরা চাকলাহাটের একজন ইউপি সদস্যের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিয়েছেন।
চাকলাহাটের ওই ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন দুলা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভোটের আগের দিন আমাকে জোর (অনুরোধ) করে কুদ্দুস প্রামাণিক ভাই টাকা দেন। কিন্তু আমি তাঁকে ভোট দেইনি। এ জন্য টাকা ফেরত দিয়েছি।’
জমির উদ্দিন দুলার প্রকাশ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে।
একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থক হিসেবে নির্বাচনে প্রচার চালিয়েছেন সফিয়ার রহমান। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘বেশকিছু ভোটার এরই মধ্যে টাকা ফেরত দিয়েছেন। অনেকে সময় নিয়েছেন। টাকা ফেরতে পেতে নানা প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।’
যুবলীগকর্মী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘একই মহল্লাবাসী হওয়ায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলদার রহমান দিলু ভোটারদের দেওয়া টাকা ফেরত পেতে আমার সহযোগিতা চেয়েছেন। এ জন্য পরাজিত কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে তিনি জোট বাঁধারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
পঞ্চগড় পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, ‘ভোটের পর যে চিত্র প্রকাশ হয়েছে, তাতে জনপ্রতিনিধিদের মান-সম্মান বলে আর কিছু থাকলো না। এ জন্য প্রার্থীরাও দায়ী।’
নির্বাচনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থগিত কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমানুল্লাহ বাচ্চু। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘টাকা দিয়ে আমি কোনো ভোট কিনিনি। দীর্ঘদিন ধরে ইউপি চেয়ারম্যান থাকায় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এসব নানা কারণে ভোটারদের ভালোবাসা পেয়ে জয়ী হয়েছি।’
এ সব ঘটনার বাইরে ভোটের ‘লেনদেন’ নিয়ে আরো কিছু অভিযোগ রয়েছেন। যদিও এসব অভিযোগ নিয়ে কোনো পক্ষই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নয়।
যেমন অভিযোগ রয়েছে একজন পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র বাবুর বাসায় বৈঠক করে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে সেখানে দুই সদস্যের মধ্যে মারামারি এবং সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদে তালাও লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সদস্য পদের চেয়ে চেয়ারম্যান পদে ‘লেনদেন’ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভোটার।
জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অমল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, টাকা দিয়ে ভোট কেনা- বেচার কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কেউ করেনি। এ জন্য এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। প্রমাণ সাপেক্ষে কেউ অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পঞ্চগড় জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মো. আমানুল্লাহ বাচ্চু ১৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি ভোট পান ১২২টি এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মির্জা সারওয়ার হোসেন ভোট পান ১১৯টি, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক এমরান আল আমিন পান ১০১টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. দেলদার রহমান ভোট পান ৯৪টি, জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল ইসলাম ভোট পান ছয়টি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম পল্লব এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) বোদা উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক এ এইচ এম ফজলুল হক দুটি করে ভোট পান।