শিক্ষককে কান ধরে উঠবস : বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদন দাখিল

নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানের নির্দেশে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে এফিডেভিট সম্পন্ন হওয়ার পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান এই প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহের হোসেন সাজু। তিনি বলেন, ‘আগামী রোববার আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে; এর আগে প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছু বলা ঠিক হবে না।’
৬৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিভাবক, স্কুলছাত্র রিফাত, তার মা, মসজিদের ইমামসহ সাত-আটজনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।
গত বছরের ১০ আগস্ট হাইকোর্ট এই আদেশে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তদন্ত করা হয়। কিন্তু ওই তদন্ত প্রতিবেদনে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে দোষী করা হয়নি। পরে প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তা হাইকোর্ট বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
আদালত বলেছিলেন, ‘পুলিশ এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম পুলিশের তদন্তের প্রতিবেদন গ্রহণ করে নথিভুক্ত করার যে আদেশ দিয়েছেন, এতে আমরা মনে করি ওই হাকিম বিচারিক মনন (জুডিশিয়াল মাইন্ড) প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
আদেশে আদালত আরো বলেন, পুলিশের তদন্তকারী দল প্রকৃত সত্য ঘটনা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলো।
এর আগে গত বছর ৭ আগস্ট হাইকোর্টে দাখিল করা পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তেজিত জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনাটি আকস্মিকভাবে ঘটেছে। শ্যামল কান্তি ভক্ত ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান দুজনই উদ্ভূত পরিস্থিতির শিকার। এতে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনায় কেউ দায়ী নয় বলে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোকলেছুর রহমানের লিখিত জবানবন্দিতে শ্যামল কান্তি বলেন, কান ধরে ওঠ-বসের ঘটনা আকস্মিকভাবে ঘটেছে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দাখিল করা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এ ঘটনায় শ্যামল কান্তি ভক্ত কাউকে দোষী করছেন না। এমনকি আদালত বা পুলিশের কাছে অভিযোগ করবেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। ফলে এ ঘটনায় কারোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গত ১৩ মে বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে, স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়।
ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি কী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পরই পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসিকে আদেশ দেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আজ এর ওপর আদেশ দেওয়া হলো।