তদন্ত কমিটির কাছে বিচার চেয়েছেন শ্যামল কান্তি

উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সামনে নিজের বক্তব্য দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার আবদুল লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে ঘটিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাজের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় তিনি তদন্ত কমিটির কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন এবং এই ঘটনার বিচারও দাবি করেন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা জেলা সার্কিট হাউসে শ্যামল কান্তির বক্তব্য রেকর্ড করেন।
বক্তব্য দিয়ে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শ্যামল কান্তি বলেন, ধর্ম নিয়ে তিনি কোনো কটূক্তি করেননি। বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত বলেও উল্লেখ করেন এই শিক্ষক। এই ঘটনাকে রাজনৈতিক চাল বলে মনে করেন তিনি।
এরপর বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হাবিবের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়।
দুপুরের বিরতির পর বন্দর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালামের বক্তব্য গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহেদ আলী লিখিতভাবে তাঁর বক্তব্য তদন্ত কমিটির কাছে পেশ করেন।
অবশ্য এর আগে এই জাহেদ আলীর নেতৃত্বেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিচার দাবি করে সার্কিট হাউস চত্বরে মানববন্ধন করা হয়।
শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ সরকারি তালিকায় বক্তব্য গ্রহণের ২১ জনের নাম রয়েছে। তবে নির্ধারিত ২১ জন ছাড়াও আরো অনেকের বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের ১৩ মে পিয়ার সাত্তার আবদুল লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র রিফাত হাসানকে বেত্রাঘাত করার জের ধরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ইসলাম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ আনে। বিষয়টি মসজিদের মাইকে প্রচার করলে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় লোকজন বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করে। অবরুদ্ধ করে রাখে বিদ্যালয়ের ভেতর।
খবর পেয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে চড়-থাপ্পড় মারেন। তারপর বাইরে নিয়ে শত শত জনতা, বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে কানধরে উঠবস করান। এই ঘটনার ভিডিও প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। এর দুদিন পর টেলিভিশন ও দৈনিক পত্রিকায় ফলাও করে প্রচারিত হয়।
এই ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করা হয়। আদালতের নির্দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ঘটনার তদন্ত করে।