নদীতে ‘ফেলার’ পরও বেঁচে গেল ৮ মাসের মেয়েটি

মাগুরা শহরের নবগঙ্গা নদী থেকে আট মাস বয়সী এক মেয়েশিশুকে জীবিত উদ্ধার করেছেন এক চায়ের দোকানি। শিশুটিকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে রাবেয়া নামের শিশুটিকে মাঝনদী থেকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, মাগুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে নবগঙ্গা নদী। ওই নদীর ওপর একটি সেতু রয়েছে। দুপুর ২টার দিকে সেতুর নিচে মাঝনদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি শিশুকে দেখতে পায় পাশের মাদ্রাসার শিশুরা। তাদের চিৎকার শুনে শিশুটিকে উদ্ধারে এগিয়ে যান পাশের চায়ের দোকানি আলম মিয়া। তিনি সাঁতরে মাঝনদী থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন।
এ সময় নদীর পাড়েই শিশুর মা হেনা পারভীন (৪৫) কাঁদছিলেন। তিনি দাবি করেন, শিশুটি তাঁর তৃতীয় সন্তান।
উদ্ধারের পর আলম মিয়াসহ স্থানীয় লোকজন শিশুটিকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর শিশুটি সুস্থ হয়। এরপর মা ও শিশুকে মাগুরা থানায় নিয়ে যান লোকজন।
শিশুটির মা হেনা পারভীন জানান, তিনি মাগুরা সদর উপজেলার মালিক গ্রামের শহর আলী ওরফে শরীফের স্ত্রী। তাঁরা ঢাকার উত্তরায় থাকেন। তাঁর স্বামী সেনাবাহিনীর (সিভিল) অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তাঁদের তিন মেয়ে। এর মধ্যে একজন কলেজে ও একজন স্কুলে পড়ে। ছেলেসন্তানের আশায় তাঁরা আরেকটি সন্তান নেন। কিন্তু এই সন্তানও মেয়ে। এ কারণে তাঁর স্বামী তাঁর ওপর মনঃক্ষুণ্ণ ছিলেন।
হেনা পারভীন দাবি করেন, শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে আজ দুপুরে ঢাকা থেকে মাগুরা আসেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় পথে মাগুরা-ঢাকা রোডের ওই সেতুর পাশে বাস থেকে নেমে পড়েন। সেখানে তাঁর হাত থেকে মেয়ে রাবেয়া নদীতে পড়ে যায়। এরপর তিনি কান্নাকাটি শুরু করলে একজন এসে উদ্ধার করেন।
তবে হেনা পারভীনের এই বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীর আলম জানান, হেনা পারভীন আজ দুপুর ১টার দিকে বাস থেকে মাগুরা বাসস্ট্যান্ডে নামেন। সেখান থেকে তিনি রিকশা বা ভ্যান নিয়ে মালিক গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে যেতে পারতেন। তা না করে তিনি ব্যাগ ও শিশুসন্তান নিয়ে উল্টো দিকে নবগঙ্গা নদীর আশপাশে ঘোরাঘুরি করেন। দুপুর ২টার দিকে তিনি সেতুর ওপর উঠে সন্তানকে নদীতে ফেলে দেন।
একই কথা বলেন শিশু রাবেয়াকে উদ্ধারকারী চা দোকানি আলম মিয়া। তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাদ্রাসার ছাত্রদের বরাত দিয়ে জানান, ছাত্ররা তাঁকে বলেছেন, দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ ওই নারী (হেনা পারভীন) একটি শিশুকে নদীতে ফেলে দেন। এই দেখে তারা চিৎকার শুরু করেন। এরপর তিনি গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন।
মাগুরার সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বসির আহমেদ জানান, আট মাসের শিশু ও তার মাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়। শিশুটির শরীর একটু খারাপ হওয়ায় সন্ধ্যায় তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক কৃষ্ণ দাস বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে জানান, শিশুটি সুস্থ। ভয় পাওয়ায় নার্ভাসনেস থেকে কিছুটা অসুস্থ হয়েছে।