কাঁদতে কাঁদতে নারী বললেন, এসপি বাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না

পুলিশ সুপারের (এসপি) পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া আলোচিত কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের সঙ্গে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক নারী। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদকে তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন।
ওই নারী আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর একমাত্র মেয়ে (৮) ও মাকে নিয়ে মাগুরা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হন। সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ওই নারী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেনের স্ত্রী। ২০১৫ সালে আকরাম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বেশ কিছুদিন পর মারা যান।
ওই নারী বর্তমানে মাগুরা শহরে একটি মুঠোফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে চাকরি করেন। মা-বাবা ও মেয়েকে নিয়ে মাগুরা শহরের আল আমিন স্কুলসংলগ্ন কাউন্সিলপাড়ার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। ওই বাসার পাশেই এসপি বাবুল আক্তারদের বাড়ি। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁরা বাবুলদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বাবুলের স্ত্রী খুন হওয়ার পর তাঁরা বাসা বদল করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী দাবি করেন, ‘এসপি বাবুল আক্তারের সঙ্গে জড়িয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাঁর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং নেই। বাবুল আক্তারের সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি এবং তাঁর সঙ্গে কখনো কোনোভাবে কথা হয়নি। যা আমার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর অনুসন্ধান করলে পাওয়া যাবে।’
ওই নারী জানান, একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ওর বাবা এসআই আকরাম ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন। আকরামের মৃত্যুর পর ফুপাতো ভাই সাদিমুল হক মুনের সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে অপবাদ দেন তাঁর ননদ জান্নাত আরা পারভীন রিনি। এরপর তাঁর ননদ দাবি করেন, আকরাম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাননি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
এই অভিযোগ এনে তাঁর ননদ তাঁদের চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে তাঁদের অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।
এসআই আকরামের স্ত্রী অভিযোগ করেন, ঢাকার ফ্ল্যাটের লোভে তাঁর ননদ জান্নাত আরা পারভীন রিনি তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ঢাকার ফ্ল্যাট মেয়ের কাছ থেকে ননদের নামে লিখে না দেওয়ায় তাঁর ওপর নির্যাতন করে ঝিনাইদহে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। নির্যাতনের বিষয়ে এর আগে মাগুরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছে।
ওই নারী বলেন, ‘আকরামের সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য এখন আমার ননদ বাবুল আক্তারের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করছেন, যা আমার সম্মানহানিকর।’
অভিযোগের ব্যাপারে ওই নারীর ননদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে বাবুল আক্তার মাগুরায় বসবাসরত তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ছোট ভাই অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান লাবু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বনানী নামের মেয়েটির স্বামী যখন মারা যায় তখন আমার ভাই পুলিশের মিশনে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ভাইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্ত করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’
গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামে নিহত হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। মোটরসাইকেলে করে আসা তিন দুর্বৃত্ত মাহমুদা খানম মিতুকে প্রথমে ছুরিকাঘাত ও পরে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। সেদিন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের দিকে যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার দিন মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তিনি আগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের আগে এসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে আসেন।
ওই দম্পতির সাত বছর বয়সী এক ছেলে ও চার বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে।
এরপর ২৪ জুন দিবাগত রাতে রাজধানীর বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁর শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।
পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বাবুল আক্তারকে তাঁর স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এর পর থেকেই কার্যালয়ে নিয়মিত ছিলেন না বাবুল আক্তার।
এরপর খবর বের হয় বাবুল আক্তারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে এটি কখনো স্বীকার করেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।
নানা নাটকীয়তার পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ওই দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।