প্রধান শিক্ষকসহ চারজন পেটালেন এক ছাত্রকে!

ঝিনাইদহে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে প্রধান শিক্ষকসহ চারজন পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় হরিণাকুণ্ডু থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ছাত্রের মা রত্না বেগম।
জেলার হরিণাকুণ্ডুর মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বাচ্চুকে লাঠি দিয়ে প্রথমে পেটান প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। পরে তাঁর তিন সহকারীও ওই ছাত্রকে পেটান বলে জানায় স্থানীয়রা।
প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, ওই ছাত্র তার সহপাঠীকে উত্ত্যক্ত করেছিল, তাই তাকে পেটানো হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করা আইনসিদ্ধ নয় বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মকছেদ আলী।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বাচ্চু বলে, কয়েক দিন পর গতকাল সে স্কুলে যায়। সকাল ১০টার দিকে ক্লাস শুরুর আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন তাকে ডেকে পাঠান। সে অফিসের বারান্দায় ওঠার সঙ্গে সঙ্গে লাঠি দিয়ে তাকে পেটাতে শুরু করেন প্রধান শিক্ষক। সে মারপিটের কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আরো ক্ষিপ্ত হন। এ সময় সেখানে ছুটে যান বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোকাদ্দেস হোসেন, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক ডাবলু লস্কর এবং অফিস সহকারী অসিত। তাঁরা সবাই স্কুলছাত্রকে পেটাতে থাকেন। এতে বাচ্চুর বাম হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়।
মঙ্গলবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাচ্চু বিছানায় শুয়ে আছে। মা রত্না বেগম তার সেবা করছেন। বাচ্চুর শরীরের আঘাতের স্থানগুলোতে জমাট বেঁধেছে রক্ত।
মারধরের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সে (বাচ্চু) তার সহপাঠী ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে। তাই তাকে ডেকে মারপিট করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পেটানো বেআইনি এ বিষয় আমি জানি না।’
ওই এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন ও মোমেদ আলী জানান, শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনা স্কুলে নতুন নয়। এর আগেও শিক্ষক ডাবলু অনেক শিশুকে বেধড়ক মেরেছেন।
এসব বিষয়ে বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ে কর্মরত অনেক শিক্ষকই আমার ভাই-ভাতিজা। আমি তাঁদের বিষয়ে কী বলব?’
হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহতাব উদ্দিন জানান, সোমবার মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে প্রধান শিক্ষকসহ চারজন পিটিয়েছেন। এ ঘটনায় আহত ছাত্রের মা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ওসি আরো বলেন, ওই ছাত্রের বাম হাত ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। স্কুলছাত্রকে চিকিৎসার জন্য হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। এ বিষয়টি তদন্তের জন্য থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাখাওয়াত হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
হরিনাকুণ্ডু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন বলেন, ওই ছাত্রের মা ও স্বজনরা ঘটনাটি বলেছেন। তবে তাঁদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মকছেদ আলী বলেন, ছাত্রকে বেত্রাঘাত করা সম্পূর্ণ বেআইনি। ওই স্কুলে ছাত্রকে পেটানোর ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।