সংলাপে না বসার সিদ্ধান্ত সরকার ও আওয়ামী লীগের

বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, আপস নয়। সরকার ও দলের সিদ্ধান্ত, কোনো সংলাপ নয়। এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের অর্থ হলো সন্ত্রাস ও নাশকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া।
গতকাল নাগরিক সমাজের পক্ষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এই প্রস্তাব সম্পর্কে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এটা অবাস্তব, অগ্রহণযোগ্য। তার কারণ হলো এসব ব্যক্তিবর্গ সন্ত্রাস, নাশকতা, জঙ্গিতৎপরতাকে আড়াল করার জন্য এবং যেই দলটি নাশকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদেরকে একটা গণতান্ত্রিক সরকার গণতান্ত্রিক দল তার সাথে একই কাতারে দাঁড় করানোর জন্য চেষ্টা করেছে। সুতরাং এইটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
এই প্রস্তাবের পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না সেই প্রশ্নও তোলেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে সন্ত্রাসীদের সাথে যদি সংলাপ হতো তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজকে আইএসের সাথে বৈঠক করত। এবং এই সংলাপের কথা যারা বলেছে ইনডাইরেক্টলি তারা সন্ত্রাসকে, নাশকতাকে, জঙ্গিতৎপরতাকে তারা প্রশ্রয় দিচ্ছে। সুতরাং এটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিওর উচ্চপর্যায়ের সভায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী। দেশে ফিরে সভার বিস্তারিত তুলে ধরতে আজ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শেষে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তোফায়েল আহমেদ।
সাবেক প্রধান নির্বাচিন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার সই করা ওই চিঠির তীব্র সমালোচনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘শামসুল হুদা হলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি ওয়ান-ইলেভেনের সময় মূল বিএনপিকে বাদ দিয়ে খণ্ডিত বিএনপিকে আলোচনার জন্য নির্বাচন কমিশনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কাজেই তাঁর সংলাপ নিয়ে চিঠির মধ্যেও ভিন্ন কোনো মতলব থাকতে পারে।’ মন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, এই প্রস্তাব মেনে যদি বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করি তাহলে আমেরিকা কেন আইএসের সঙ্গে সংলাপ করছে না?
যদি সংলাপ-সমঝাতা না করেন তাহলে চলমান সংকট কীভাবে কাটবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইনের আওতায় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
১৯৯৬-৯৭ সালে পার্বত্য অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টিকারী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নেতা সন্তু লারমার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যদি সংলাপ করা যেতে পারে তবে বিএনপির সঙ্গে কেন নয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কী বলতে চাচ্ছেন? সন্তু লারমা আর এইটাকি এক জিনিস? না, ওইটার সাথে এইটা মিলে না। এইটার সাথে সংলাপ করার মানে হইল ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী, নাশকতা এবং জঙ্গিতৎপরতাকে উৎসাহিত করা।’
আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরো বলেন, ‘কথা পরিষ্কার।’ প্রশ্ন আপনারা (সাংবাদিকরা) একশবার করতে পারবেন। কিন্তু লক্ষ্য একটাই। নাম্বার ওয়ান, নাশকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিতৎপরতা তার সাথে কোনো আপস নাই। এই পরিস্থিতিতে সংলাপে বসা মানেই এদেরকে প্রশ্রয় দেওয়া। বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, দলের পদক্ষেপ হলো তাদের সাথে কোনো সংলাপ না। আর যারা এই সংলাপের উদ্যোগ নিয়ে চিঠি দিয়েছেন তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, নাশকতাকে গণতন্ত্রের সাথে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছেন। সুতরাং তাদের প্রস্তাব অবাস্তব, অগ্রহণযোগ্য।’
এছাড়া সাংবাদিকরা আরো জানতে চান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের উদ্যোগে যদি বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে পারেন তাহলে এখন কেন নয়? এ প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, সে সময় বিএনপি পেট্রলবোমা মেরে সন্ত্রাস ও নাশকতকা সৃষ্টি করেনি। এখন করছে। তাই এখন তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়।