জনগণের ভোটের কোনো বিকল্প নেই : তারেক রহমান
দেশে ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে হলে জনগণের ভোটের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।
তারেক রহমান বলেন, সংবিধান কিংবা লিখিত বিধি-বিধান দিয়ে কখনোই ফ্যাসিবাদ ঠেকানো যায় না। রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে যদি ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে হয় তাহলে অবশ্যই জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
তারেক রহমান আরও বলেন, সরাসরি ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার প্রয়োগের যে চর্চা, এই চর্চার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে জনগণ শক্তিশালী হয়ে উঠে। জনগণ শক্তিশালী না হলে রাষ্ট্র এবং সরকার শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে না।
‘জনগণ সতর্ক থাকুন’
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে তারেক রহমান বলেন, আমি একটা বিষয় আজকে বলতে চাই, নির্ধারিত সময় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের রাজপথের সহকর্মী যোদ্ধা কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বা তাদের সদস্যদের বক্তব্য মন্তব্যে গণতান্ত্রকামী জনগণের মনে নানা জিজ্ঞাসা জন্ম দিয়েছে। এই অনুষ্ঠান থেকে আমি গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তির সকল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, গণতান্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি দূরত্ব তৈরি হয় রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পতিত পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্ট চক্রের পুনর্বাসনের পথ সহজ হয়ে উঠবে, তাদের সুযোগ তৈরি হবে। এ ব্যাপারে আমি সারা দেশে গণতন্ত্র প্রিয় জনগণের প্রতি সজাগ এবং সতর্ক থাকার বিনীত আহ্বান জানাই।
‘ভোটের পথে বাধা হলে গণতন্ত্র সংকটে পড়বে’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নানা রকম উপায় বা শর্ত আরোপ করে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে যদি বাধা সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই গণতন্ত্রের উত্তোলনের পথ সংকটে পড়বে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের মনে রাখা দরকার, স্বৈরাচারী শাসনের সময় আমরা কেউই প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মী, প্রত্যেকটি বিরোধী দলীয় কর্মী কেউ নিরাপদে ছিল না, কারও পরিবার নিরাপদে ছিল না। যদি গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সংকটে পড়ে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে জনগণ নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করতে না পারে তাহলে সামগ্রিকভাবে সকলকে, সমগ্র রাষ্ট্র দেশকে সমস্যায় পড়তে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে জনগণ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারের অবসান ঘটিয়েছে রাজপথে নেমে আসার মাধ্যমে।
‘জনগণের কাছে যান’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশ এবং জনগণের কল্যাণে বিএনপির নেওয়া পরিকল্পনাগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনারা দেশের সর্বস্তরের জনগণের কাছে বিএনপির যে কল্পনাগুলো সেই পরিকল্পনাগুলো আপনারা জনগণের সামনে তুলে ধরুন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। আসুন আমরা সকলে জনগণের সামনে দাঁড়াই, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণকে বলি, ভোট দিলে ধানের শীষে দেশ গড়বো মিলে-মিশে।
আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান, এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন যা জনগণের মনে বিরুপ ধারণা তৈরি করতে পারে। মনে রাখবেন, জনশক্তি জনবল বিএনপির মনোবল। জনগণের ভালোবাসায় থাকুন, জনগণকে ভালোবাসায় রাখুন।
বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ভার্চুয়ালি লন্ডন থেকে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনার পরপরই জাতীয় সঙ্গীত এবং দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনা করা হয়।
১৯৮০ সালের ১৯ আগস্ট প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপির অঙ্গসংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল’ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুপুরে শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মোস্তাফিজুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াসীন আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আহসান, মহানগর দক্ষিনের জহির উদ্দিন তুহিন ও উত্তরের শেখ ফরিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহীদ শওকত আলীর সহধর্মিনী রাবেয়া আক্তার, শহীদ সাইদুর রহমানের মেয়ে সুমাইয়া আখতার, শহীদ নজরুল ইসলামের ছেলে রিয়াজ আহমেদ রাজু এবং গুম হওয়া কাউসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার মীম তাদের কষ্টের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু মহানগর দক্ষিন বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, তানভীর আহমেদ রবীন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, জাসাস হেলাল খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সহধর্মিনী বীথিকা বিনতে হোসাইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবীন, সাইফুল ইসলাম ফিরোজসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।