‘মোবাইল ট্র্যাকিং করে ওরে নিয়ে গেছে’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/06/13/photo-1434213636.jpg)
নারীদের যৌন হেনস্তা ও ধর্ষণের বহু ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এসব ঘটনার বিচার না হওয়া নিয়ে প্রতিনিয়তই হচ্ছে মিছিল-মিটিং। ব্যবস্থা নিতে না পারায় অভিযোগ উঠছে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও। এর মধ্যেই পুলিশেরই এক সদস্য পুলিশেরই কর্মকর্তার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুললেন।
ওই নারী পুলিশ সদস্য তুরাগ থানায় কর্মরত। আর তাঁর সাবেক স্বামী খিলগাঁও থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। সাবেক স্বামী চারজন সহযোগীকে নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওই নারীর।
ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি ‘ধর্ষণের শিকার’ নারী পুলিশ সদস্যের বোন বলেন, ‘আমার এই বোন এবং বোনের জামাইর মধ্যে ইদানীং বিভিন্ন মামলা চলতেছে। এর আগে ওকে ছেড়ে দিছে, তালাক দিয়া দিছে। তালাক দিয়ে দেওয়ার পর মনে করেন, ওর একটা মেয়ে বাচ্চা আছে। দুই বৎসর এগারো মাস, প্রায় তিন বছর। এই বাচ্চাটাকে প্রায় সাত মাস আগে ছিনিয়ে নিয়ে আসছে। এ রকম পাঁচ ছয়জন মাস্তান নিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে, হঠাৎ করে আক্রমণ করে, পিস্তল-কিরিচের মুখে ভয় দেখিয়ে বাচ্চাটারে ছিনিয়ে নিয়ে আসছে।’ urgentPhoto
কিছুদিন আগে আদালতে সন্তানের সঙ্গে মায়ের দেখা হওয়ার বর্ণনা দিয়ে নারী কনস্টেবলের বোন বলেন, ‘বিগত সাত মাস পর ধরেন আমরা মামলা করছি। মামলা করার পর এক পরিপ্রেক্ষিতে ধরেন ৭ তারিখে আমরা জজকোর্টে বাচ্চাটারে দেখতে পাইছি। আমার এই বোন বাচ্চারে দেখার পরে একটু ইমোশনাল হয়ে গেছে। বাচ্চাটা পুরা মানসিক প্রতিবন্ধীর মতো হইয়া গেছে এবং মাকে চিনতে পারতেছে না। আমার বোন এটাতে কষ্ট পাইতেছে।’
‘তখন আমি বোনকে সান্ত্বনা দিলাম, যে বোন তুমি টেনশন কইরো না। আল্লাহ ভরসা, তোমার বাচ্চা তোমার বুকে একদিন না একদিন আসবেই। ও তার বাবার কাছে আছে, টেনশন কইরো না। আমরা তো চেষ্টা করতেছি। এর মধ্যে ভাইয়া (সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে), আমার এই বোন একটু শারীরিক অসুস্থ। ও একটু ছুটি নিছে। বলছে, আমি পুলিশ, আমি একটু রাজারবাগ হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট করব সুস্থতার জন্য। তো রাজারবাগে আসছে।’
নারী কনস্টেবলের বোন দাবি করেন, মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে তাঁর বোনকে অপহরণ করা হয়েছে। ‘চিকিৎসার জন্য রাজারবাগের উদ্দেশে আসছে ও। আসার পর তাঁর স্বামী ওর মোবাইল নাম্বার কী বলে, কীভাবে যেন ট্রাকিং নাকি কী জানি কী করে যেন, কোন সময় কোন জায়গায় কোন অবস্থানে আছে। ওটা করছে। করে ওকে ওখান থেকে কী বলে, খিলগাঁও নিয়ে গেছে। খিলগাঁও নেওয়ার পরে বলতেছে- তুমি আসো, আসছোই যখন বাচ্চাটার সাথে একটু দেখা করো। তখন বলল, না আমি বাসায় যাব না, তুমি তাইলে খিলগাঁও থানায় নিয়ে আসো, আমি খিলগাঁও থানায় গিয়ে বাচ্চা দেখব। তোমার বাসায় যাব না। তখন আমার এই বোনের শাশুড়ির সাথে কথা বলাইছে। ওর ভাসুরের সাথে কথা বলাইছে ওর স্বামীর নাম্বার থেকে যে, বাসায় আসো অসুবিধা নাই। ও (শিশুসন্তানের নাম উল্লেখ করে) বাসায় আছে। তখন ওকে না জানি কী খাওয়াইছে, কী করছে ওর আর সেন্স নাই। একপর্যায়ে ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে..., সাথে আরও চারজন ছিল সিভিলের।’
সাংবাদিকদের কাছে নারী কনস্টেবলের বোন বলেন, ‘এই ঘটনা যেন শাস্তি পায় এটাই আমাদের কাম্য। একটা মেয়েকে নিয়ে এভাবে নিয়ে একটা ইয়ে করল। ওর মাথার ব্রেন একটু ইয়ে হয়ে গেছে, কিছু বলতে পারছে না সেভাবে। কিছু বলতে পারে, কিছু বলতে পারে না। স্মরণশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে।’
সাংবাদিকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কবে নিয়ে গেছিল? কোথায় নিয়ে গেছিল এবং কখন কীভাবে সেটা বলেন?’
উত্তরে নারী কনস্টেবলের বোন বলেন, ‘১০ তারিখে। ১১ তারিখ কীভাবে যেন ও নিজেকে ইয়ে করে ওই জায়গা থেকে বের হইছে। মানে ওকে তো তালা মেরে বন্দী করে রাখছিল। একপর্যায়ে কীভাবে যেন কৌশলে বের হইতে পারছে। বের হওয়ার পর মানে আমাকে ফোন দিছে। আমি সেই মুহূর্তে কোর্টে ব্যস্ত ছিলাম আমার কাজে। তখন আমি আবার আমার ভাইকে ফোন দিলাম যে বোনকে তার জামাই ধরে নিয়ে গেছে। ওকে আটকাই রাখছে। মেরে ফেলবে বলে। এখন তুমি গিয়ে একটু দেখো তো ঘটনাটা কী!’
‘তখন আমার ভাই গিয়ে আমার বোনকে উদ্ধার করে, রাজারবাগ মহিলা হোস্টেলে রাখছে। খিলগাঁও থানায় নিয়ে গেছে প্রথমে। থানা কোনো অভিযোগ নেয় নাই আমলে। কোনো পদক্ষেপও নেয় নাই। ওরে (অভিযুক্ত এএসআই) কোনো পানিশমেন্টও (শাস্তি) দেয় নাই। তারপর করল কি... আমার ভাই আবার ওকে রাজারবাগ মহিলা হোস্টেলে রেখে আমাদের বাড়িতে চলে গেছে। পরে কালকে আমরা আবার আইসা ওকে রাজারবাগ হাসপাতালে ভর্তি করছি। ওর ট্রিটমেন্ট হওয়া দরকার। কারণ ও পুরাপুরি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’
দুদিন পরে কেন হাসপাতালে ভর্তি করলেন?-সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বোন বলেন, ‘দুই দিন পরে তো ভর্তি করি নাই। যেদিন আমরা খোঁজ পাইছি, সেদিন রাত্রে তো ওরে উদ্ধারই করলাম। রাত্রে উদ্ধার করার পর থানায় নিয়ে গেলাম। থানায় নেওয়ার পর আমরা ভর্তি করার জন্য রাজারবাগে নিয়ে আসছি। রাজারবাগ ওর ওই অবস্থা দেখে ভর্তি করে নাই। হোস্টেলে রাখছে। রাখার পর আমরা তো সকালবেলা এসে ওকে ভর্তি করছি।’
‘উনি বলছেন যে উনি পালিয়ে এসেছেন, আপনারা বলছেন যে উদ্ধার করেছেন..’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নিজের জান বাঁচানোর জন্য একপর্যায়ে কীভাবে যেন পালিয়ে এসেছে। ও-ই ওটা বলতে পারবে ভাই। ও-ই তো ওটার শিকার। ও আমাকে যেটা বলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটা বললাম।’
সাংবাদিকদের প্রশ্ন, ‘এখানে কেন আসছেন? এবং এখানে এসে কী কী করলেন?’
‘এখানে আসছি ওর বিভিন্ন টেস্ট দিছে। ওর মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত টেস্ট করতে হবে। ব্রেনে কোনো কিছু হইছে কি না বা এমন কি খাওয়াইছে যাতে ওর মাথার ব্রেন এমন হইছে।’
ওনার প্রাক্তন হাসবেন্ড কী করে? প্রশ্নে বোন বলেন, ‘ও এএসআই, ও খিলগাঁও থানায় ছিল। পরে আমি যখন কালকে সন্ধ্যার সময় খিলগাঁও থানায় গেছি। যাওয়ার পর সেই ওসিরে আমি পাই নাই। তার সাথে মোবাইলে কথা হইছে। ওসি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে। কোনো অভিযোগ নেয় নাই। জিডিও করে নাই। কোনো পদক্ষেপও নেয় নাই। অভিযোগও আমলে নেয় নাই।’