মুন্সীগঞ্জে আলু নিয়ে সাইকেলে করে দিনমজুরি

বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট আলুর তিন ভাগের এক ভাগ উৎপাদন হয় মুন্সীগঞ্জ জেলায়। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমির আলু উত্তোলন করা হয়েছে।
জমি থেকে আলু তোলার পর তা বস্তায় ভরে হিমাগারের উদ্দেশে ছুটছে ভ্রাম্যমাণ শ্রমিকের সাইকেল। এখন সিরাজদিখান, শ্রীনগর, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরলেই দেখা মিলবে এ চিত্রের।
বগুড়া জেলা থেকে আসা শ্রমিক মো. শাহজাহান বলেন, ‘এক মাস হলো এসেছি। আরো প্রায় দুই মাস থাকতে হবে। আমরা একসঙ্গে নয়জন দল বেঁধে কাজে এসেছি। ভোরে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাইকেলে করে আলুর বস্তা নিয়ে হিমাগারে যাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আমাদের কাজ। প্রতিবছরই আলুর মৌসুমে এই জেলাতে ভ্রাম্যমাণ শ্রমিক হিসেবে কাজে আসি। সঙ্গে শুধু আমাদের সাইকেল থাকে। ৮০ কেজি ওজনের তিনটি আলুর বস্তা সাইকেলে বিশেষ কায়দায় রেখে হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।’
কুড়িগ্রাম থেকে আসা রহমান মিয়া বলেন, ‘এই এলাকায় আলুর মৌসুমে মজুরি ভালো পাওয়া যায়। তা ছাড়া ভ্রাম্যমাণ শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকায় প্রতিবছরই এখানে আসি। তিনটি বস্তার জন্য দূরত্বভেদে জমি থেকে হিমাগার পর্যন্ত ১২০-১৮০ টাকা নিয়ে থাকি। দিনশেষে সব মিলিয়ে দেড়-দুই হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।’
রহমান মিয়া আরো জানান, জমির পাশেই একটি অস্থায়ী ঘর তৈরি করে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। দলবদ্ধভাবে থাকায় কোনো সমস্যাই বড় মনে হয় না। ব্যস্ততার মধ্যে থাকায় পরিবার-পরিজন ছেড়ে থাকার কষ্ট অনেকটাই মুছে যায়।
ফরিদপুরের শ্রমিক সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আলু তোলার কাজে এখানে এসেছি। মজুরি নির্ধারণ হয় চুক্তির ভিত্তিতে। অথবা দৈনন্দিন কাজ অনুযায়ী। আমি প্রতিদিন আলু তোলার জন্য মজুরি হিসেবে ৩৫০ টাকা পেয়ে থাকি। ফরিদপুর থেকে প্রতিবারই এই অঞ্চলে ১০ থেকে ১২ জন করে চলে আসি। আমার স্বামীও এই কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।’
খিদিরপাড়া গ্রামের আফজাল আলী বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলু লাগানো, তোলা এবং পরিবহনের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে এই অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ শ্রমিকরা এসে থাকেন। স্থানীয় শ্রমিক সংকটের কারণে বাইরের জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা বড় ভূমিকা পালন করেন। তা ছাড়া বাইরের জেলা থেকে আসা শ্রমিকদের মজুরিও তুলনামূলক কম। তাঁরা কর্মঠও।’