বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইন্টারনেট সংযোগকারীর মৃত্যু

নরসিংদীর পলাশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত উত্তম দাসের (৩২) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় আহত ফাহিম মিয়া (২৮) আশঙ্কাজনক অবস্থায় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে পলাশ নতুন বাজার এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগের কাজ করতে গিয়ে এক লাখ ৩২ হাজার ভোল্টের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন তাঁরা।
নিহত উত্তম দাস ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত দুলাল দাসের ছেলে। তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্রে মাস্টাররোলে চাকরির পাশাপাশি এলাকায় ডিশ লাইন ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার কাজ করতেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ফাহিম ও উত্তম দাস পলাশ নতুন বাজারের বিমল বাবু ও ইলিয়াছ মিয়ার ভবনের ছাদ দিয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন সংযোগের কাজ করছিলেন। ফাহিম ইন্টারনেটের তার এপার থেকে ওপার নেওয়ার জন্য একটি পানির বোতলে বেঁধে ঢিল ছোড়ে। ওই ঢিল পাশের ঘোড়াশাল তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক লাখ ৩২ হাজার ভোল্টের ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ লাইনের স্টটে লেগে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে উত্তম দাসের ৯৫ ভাগ ও ফাহিমের ৬০ ভাগ শরীর পুড়ে যায়। শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার রাতে উত্তম দাসের মৃত্যু হয়। অপর আহত ফাহিম মিয়ার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুরে উত্তম দাসের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছালে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার।
ওই সময় উত্তম দাসের বাবা দুলাল দাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যু একটি দুর্ঘটনা। কারো বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নাই। তবে ভবিষ্যতে যেন আর কাউকে এভাবে ছেলে হারাতে না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজর রাখা উচিত।’
স্থানীয় লোকজন জানায়, ঘোড়াশাল পৌরসভার অনুমোদন না নিয়েই অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের দুর্ঘটনা বাড়ছে।
স্থানীয় রুহুল আমিন ও মানিক মিয়া বলেন, তিন বছর আগেও নতুন বাজার এলাকায় দুটি ভবনের ছাদে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে রাজন ও বিপাশা নামের দুই শিশু মারা গেছে। এ ছাড়া প্রায়ই বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে হলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ লাইনের নিচে ভবন নির্মাণে সতর্ক হতে হবে।
এদিকে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, লিংক থ্রি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বিটিআরসির অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ দিচ্ছে। আর সেই অবৈধ ইন্টারনেট সংযোগ দিতে গিয়েই অসাবধানতার কারণে এই দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে লিংক থ্রির স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি করপোরেট সংযোগ নিয়ে তা থেকে পলাশ লিংক টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছি।’
প্রতিষ্ঠানটি বিটিআরসির অনুমোদিত কি না জানতে চাইলে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘অনুমোদনের চেষ্টা চলছে। আপাতত রেডিয়েন কমিউনিকেশন থেকে সাপোর্ট নিয়ে গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছি।’
তবে রেডিয়েন কমিউনিকেশনের পলাশ জোনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম মুন্না বলেন, তাঁদের সঙ্গে রেডিয়েনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা লিংক থ্রি সংযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ইন্টারনেটের ব্যবসা করছেন। আর এই দুর্ঘটনার যাবতীয় দায়ভারও তাদের।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনায় মামলা করতে পরিবারের জন্য অপেক্ষা করছি। পরিবার না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে। একই সঙ্গে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তাদের তলব করা হয়েছে।’