সীতাকুণ্ডের ‘জঙ্গিদের’ গ্রামে ‘নিখোঁজ’ ৭০ জন
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দুটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে হতাহত চরজনের গ্রামের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে। তারা দীর্ঘদিন ধরেই পরিবার-বিচ্ছিন্ন ছিলেন। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, এই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আরো প্রায় ৭০ জন নারী-পুরুষ ‘চাকরি বা ব্যবসায়িক কারণে নিখোঁজ’ রয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ঘটনায় ‘জঙ্গিদের ঠিকানা’ হিসেবে বাইশারী ইউনিয়নের নাম ব্যবহার করার পরিপ্রেক্ষিতে ‘পরিবার-বিচ্ছিন্ন’ এমন ৭০ নারী-পুরুষের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এদের সম্পর্কে তথ্য যাচাই-বাছাই জন্য স্থানীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তত্ত্বাবধানে ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে ইউপি সদস্যদের সমন্বয়ে আরো নয়টি ‘সাব-কমিটি’ গঠন করা হবে। তারা ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি এলাকায় এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের একটি তালিকাও তৈরি করবে।
আজ রোববার দুপরে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরিবিষয়ক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সীতাকুণ্ড পৌরসভার প্রেমতলা এলাকায় ছায়ানীড় নামে একটি বাড়িতে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় নিহত হন কামাল উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী জোবাইরা ইয়াসমিনসহ পাঁচজন। এদের মধ্যে একজন শিশুও ছিল।
এর আগের দিন বুধবার কাছাকাছি আমিরাবাদ এলাকার ‘সাধন কুঠীর’ থেকে জহিরুল হক (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে জসীম) ও তাঁর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানাকে (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে আর্জিনা) গ্রেপ্তার করা হয়। এই চারজন পরস্পরের আত্মীয়। তাদের সবার বাড়ি বাইশিরা ইউনিয়নের দুর্গম যৌথখামারপাড়ায়। তারা চাকরি কথা বলেই ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই আজ জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সীতাকুণ্ডে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ নিহত দম্পতি এবং গ্রেপ্তার দুজনের গ্রামের বাড়ি বাইশারী ইউনিয়নের যৌথখামারপাড়া পরিদর্শন করেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এর আগে নিখোঁজদের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে মতবিনিময় সভা হয়।
সভার ব্যাপারে বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাইশারী ইউনিয়নের আরো ৭০ জন নারী-পুরুষ চাকরি ও ব্যবসায়িক কাজে দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের বাহিরে রয়েছেন। অনেকের সঙ্গে পরিবারেরও কোনো যোগাযোগ নেই।’
‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের নামের তালিকা তৈরি করে তাদের সম্পর্কে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বারদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিগুলো কারা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ এবং স্থানীয়দের মধ্যে কারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করবে’, যোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘জঙ্গিদের ঠিকানা হিসেবে বাইশারীর নাম ব্যবহৃত হচ্ছে। সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। তবে বাইশারীতে জঙ্গি এবং জঙ্গিদের কোনো চিহ্ন মিলেনি। তারপরও প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বাইশারীতে। অতিরিক্ত টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ইউনিয়নের বাহিরে আছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি এবং তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে।’
বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর, নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদ কবির, মৌজা হেডম্যান মং থোয়াইহ্লা মারমা, বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তা আবু মূছাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।