হিমাগার সংকটে আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক

রাজশাহীর কৃষক হিমাগারে আলু রাখতে পারছেন না। বিভিন্ন এলাকার হিমাগার কর্তৃপক্ষ ‘আলু রাখার স্থান নেই’ বলে মাইকিং করছে। এতে জমি থেকে আলু তুলে কৃষক পড়েছেন বিপাকে। এই সুযোগে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কম দামে আলু কিনে নিচ্ছে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের কৃষক আবদুল হানিফ দুলু ছয় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চলতি মৌসুমে আলু চাষ করেছিলেন। বীজ, কীটনাশক, সার, শ্রমিকের মজুরিসহ আরো অনেক ঝামেলা পেরিয়ে মাঠের আলু তুলতে শুরু করেছেন তিনি। ফলন ভালো হলেও এখন তাঁর মাথায় হাত। হিমাগারে জায়গা সংকট। তাই রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি করে খোলা আকাশের নিচে আলু রেখেছিলেন। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে ৭৮০ টাকা বস্তা দরে আলু অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
আবদুল হানিফ দুলু জানান, তাঁর ছয় বিঘা জমিতে ২৩৯ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৮৫ কেজি) আলু উৎপাদন হয়েছে। বিঘায় খরচ হয়েছিল ২৭-২৮ হাজার টাকা। হিমাগারে জায়গা সংকটের কারণে প্রতি বস্তা আলু ৭৮০ টাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হয়েছে তাঁকে। এতে প্রতি বিঘায় ৩১ হাজার টাকা পাচ্ছেন তিনি।
এই সমস্যা শুধু আবদুল হানিফ দুলুর নয়। এমন সমস্যায় পড়েছেন রাজশাহী জেলার কৃষকরা। জেলার বাগমারা, পবা, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, দুর্গাপুর, চারঘাটসহ অন্য উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা। অনেকে ভালো দামের আশায় ১০ থেকে ১২ দিন ধরে আলু বস্তাভর্তি করে মাঠে ও রাস্তার পাশে রেখে অপেক্ষা করছেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার রাজশাহী জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ৩৫ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যদি আলু উৎপাদিত হতো তাহলে এ বছর পরিমাণ হতো প্রায় ৯০ লাখ বস্তা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আলু বেশি চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি বস্তা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রাজশাহী জেলায় সরকারি-বেসরকারি ২৭টি হিমাগার আছে। হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা যাবে প্রায় সাড়ে ৩৪ লাখ বস্তা। বাকি তিন ভাগের দুই ভাগ আলু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক।
কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর উৎপাদন এবার বেশি। আলু সংরক্ষণে রাখার জন্য সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। হিমাগারে জায়গা সংকটের কারণে অনেকে মাঠেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। আলু নিয়ে একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছে কৃষকরা। মাঠেই বিক্রি করে দেওয়ায় আলুর ভালো দামও পাচ্ছে না তাঁরা। এ ক্ষেত্রে আলু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত এবং আলু চাষে সফল কৃষক আবদুর রহিম সরকার জানান, একটু উৎপাদন বেশি হলেই নানা ঝামেলায় পড়তে হয় কৃষকদের। আবার প্রতিটি হিমাগার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ব্যাপক জমিতে আলু চাষ করে থাকেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে চাষিদের কিছু আলু হিমাগারে নেওয়ার পর আলু নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। হিমাগার মালিকদের নিজস্ব আলুতে হিমাগার ভর্তি না হলে আবারও তারা আলু নিয়ে থাকে। এই জেলায় আরো হিমাগারের প্রয়োজন আছে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, অনুকূল আবহাওয়া এবং আলুক্ষেতে অন্যান্য বছরের মতো মড়ক না লাগায় এ বছর আলুর ব্যাপক উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে, রাজশাহী অঞ্চলে আরো বেশি হিমাগার থাকলে চাষিদের কষ্ট কম হতো বলে মনে করেন তিনি।