চীন থেকে সাবমেরিন কিনে বিপাকে প্রধানমন্ত্রী : বিএনপি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কিনে প্রধানমন্ত্রী এখন বিপাকে। কারণ ভারত মনে করছে শেখ হাসিনার ওপর চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারত তার পরীক্ষিত বন্ধুর এ ধরনের বিচ্যুতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির পক্ষে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী এ কথা বলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পাশাপাশি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, ভারত এখন শেখ হাসিনার ওপর থেকে চীনের প্রভাব কাটাতেই প্রতিরক্ষা চুক্তি করার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও চারদিকে খেলতে গিয়ে এধরনের হোঁচট খাবেন তা তিনি আগে ভাবতে পারেননি। কারণ ভারত যে নাছোড়বান্দার মতো তার স্বার্থের অনুকূল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তিটি নিশ্চিত করতে চায়, এই বাধ্যবাধকতার মধ্যে আটকে পড়তে হবে তা প্রধানমন্ত্রী পূর্বে অনুমান করতে পারেননি।
রিজভী বলেন, ‘যে ভারত বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার উৎস তারা যদি বেঁকে বসেন তাহলে বাংলাদেশ সরকারের জন্য তা মহা উদ্বেগ ও মহা দুশ্চিন্তার বিষয়। বিশ্বস্ত বন্ধুকে অখুশি করে কোনো কাজ করা যায় না। তাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে ‘সুপার হিউম্যান স্পিডে’ এগিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে হবে, এর মাধ্যমে দু’দেশের যৌথ সামরিক মহড়া হবে, এই চুক্তির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে দু’দেশের মধ্যকার বৃহত্তর কৌশলগত সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে ইত্যাদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পেরেছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিলীন হয়ে যাবে, বাংলাদেশ স্বাধীনতা হারাবে। এটার পরিণতি হবে ভয়ানক।’
বিএনপি নেতা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই-দয়া করে আপনি বাংলাদেশকে কাশ্মীর বানাবেন না। নিজের ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নসাধকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যকে ভারতের জিম্মায় তুলে দিবেন না। এমনি নানা ধরনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমাগত চরম লোকসানের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। এখন বাংলাদেশে বেসরকারি চাকরি খাতে ভারত আধিপত্য বিস্তার করছে। বাংলাদেশের লক্ষ কোটি শিক্ষিত বেকার পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর ওপর বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের রক্তাক্ত আগ্রাসনের কোনো কমতি নেই। বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গনও এখন ভারতীয়করণ করা হচ্ছে। কৌশলে বাংলাদেশের টেলিভিশনে ভারতীয় গণমাধ্যমের সীমাহীন প্রচার-প্রসার তুঙ্গে থাকায় আমাদের হাজার বছরের ভাষা-সংস্কৃতি এখন আধিপত্যবাদী আগ্রাসনের শিকার। সুতরাং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে বাংলাদেশকে উপনিবেশ বানানোর এক সুদূরপ্রসারি অশুভ পরিকল্পনার অংশ।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুলিশ ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কর্তৃক বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত আছে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ইত্যাদি ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে কুসিক এলাকার বর্ধিত ৯টি ওয়ার্ডে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসীরা এতটাই বেপরোয়া যে, সেখানকার সাধারণ ভোটারসহ বিএনপি সমর্থক ও নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বর্ধিত এই ৯টি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রসহ মোট ৪৩টি ভোটকেন্দ্রকে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে সেখানকার সাধারণ ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে পুলিশ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি, গ্রেপ্তার ও তল্লাশির নামে হয়রানি অব্যাহত আছে। বেশ কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক অনিয়ম ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের সুষ্পষ্ট অভিযোগ থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় রিটার্নিং অফিসার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সেখানকার নির্বাচনী পরিবেশ এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্যের মধ্যে কোনো মিল নেই।’