বাগেরহাটে ট্রলারডুবিতে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীতে খেয়া পারাপারের ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।
তবে নিখোঁজের তালিকায় থাকা মোরেলগঞ্জের ভাইজোড়া এলাকার খাদিজা বেগম (৪০) ও তাঁর ছেলে জুবায়ের হোসেন খুলনার আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মোরেলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি খাদিজার স্বামী স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক শাখার লোন অফিসার মো. কালামের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, খাদিজা ও তাঁর ছেলে দুজনেই সুস্থ আছেন।
ইউএনও আরো বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উদ্ধাকারী দলের সদস্যরা নদীতে ভাসমান বিভিন্ন এলাকা থেকে হতভাগা নয়জনের লাশ খুঁজে পান। পরে নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয়ে লাশগুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় মোট ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ইউএনও জানান, খাদিজা ও তাঁর ছেলে জুবায়েরের সন্ধান পাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজের যে তালিকা করা হয়েছিল, তা কমে ছয়জন হয়েছে। এই ছয়জনের সন্ধানে তাঁদের উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মাসুদার রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাঁরা নয়জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যাঁদের লাশ উদ্ধার হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছে মোরেলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালী ইউনিয়নের কাছিকাটা গ্রামের মৃত কাসেম আলী শেখের ছেলে আবদুল মজিদ শেখ (৭৫), একই ইউনিয়নের কাছিকাটা গ্রামের নাসির শেখের ছেলে নাজমুল (৬), দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়নের আলতিবুরুজবাড়িয়া গ্রামের মৃত আবদুল গফ্ফার হাওলাদারের ছেলে মো. সুলতান হাওলাদার (৫৫), একই ইউনিয়নের বুরুজবাড়িয়া গ্রামের আবদুল গফুর হাওলাদারের ছেলে মো. আনসার হাওলাদার (৫০), বলইবুনিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আলম চাপরাশির স্ত্রী সালমা (৩০) ও তাঁর ছেলে সাজ্জাদ (২), হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামের আবদুস ছালাম শেখের ছেলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মী মো. রফিকুল ইসলাম (৩৫), শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা গ্রামের মৃত সামসুল হুদার (ব্যাংক কর্মকর্তা) ছেলে রায়েন্দা পাইলট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আল-সামস আবির (১৭) এবং গোপালপুর চিংড়াখালী গ্রামের তবিবুর রহমানের স্ত্রী মুন্নি বেগম (৪০)।
তৃতীয় দিনে উদ্ধারকাজে অংশ নেয় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের একাধিক দল। নিখোঁজ ছয়জনের সন্ধানে তারা নৌযান ও ট্রলার নিয়ে নদীর বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখে।
গত মঙ্গলবার সকালে প্রমত্তা পানগুছি নদীতে খেয়া পারাপারের ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো যাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছে উপজেলার পল্লীমঙ্গল গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে রাহাত (১০ মাস), বারইখালী শহিদুল ইসলামের মেয়ে লাবণী (২০), উত্তর ফুলহাতা গ্রামের মহসিন হোসেনের ছেলে হাসিব (৬), উত্তর সুতালড়ী গ্রামের হাফেজ আবদুল আজিজের স্ত্রী কামরুননেছা (৫৮), শরণখোলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল জাহিদ হোসেন লিটনের স্ত্রী নাছিমা (৩৫), পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের খলিল তালুকদারের স্ত্রী নাছরিন (২৮)।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পানগুছি নদীতে খেয়া পারাপারের জন্য ব্যবহৃত ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। এ সময় অধিকাংশ যাত্রী তীরে উঠতে পারলেও অন্তত ২০ জন নিখোঁজ ছিলেন।