ভারত থেকে প্রধানমন্ত্রী শুধু ‘কুছ’ পেয়েছেন : ফখরুল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশের মানুষের ন্যূনতম আশা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের চতুর্থ বার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশের কোনো অর্জন নেই।
দৈনিক আমার দেশ বন্ধের চার বছর উপলক্ষে আজ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তারা অবিলম্বে এই পত্রিকাসহ বন্ধ সব গণমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
বক্তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে চায় না। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশের কী অর্জন হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘৪৬ বছর পরে বাংলাদেশ কি সব ব্যাপারে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে? আমার সক্ষমতার জন্য প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা লাগবে? ভারতের টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স লাগবে? ভারতের মতামত লাগবে? অথচ আমাদের জীবনমান তাদের চেয়ে উন্নত।’ তিনি বলেন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে এ সরকারের ১৮টা কমিটি কাজ করছে। সাংবাদিকরা সাংবাদিক হিসেবে আজ তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আশা পূরণ হয়নি। ন্যূনতম ব্যাপার। কোটির ওপর বেশি মানুষ যে নদীর (তিস্তা) ওপর তার জীবন চলে। সেই নদীর পানির একটা হিস্যা হবে, সেটার একটা চুক্তি হবে, দুঃখজনকভাবে সেটা হয়নি।
ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ম্যায় পানি মাঙ্গা, মুঝকো বিদ্যুৎ মিলা। কুছ তো মিলা। অর্থাৎ উনি নিজেই বলেছেন, মেলেনি। শুধু তাই বলেনি। শুধু কুছ মিলেছে। সেটা হচ্ছে বিদ্যুতের কথা বলেছেন। উনি নিজেই বলে দিয়েছেন। এখানে আমাদের কিছু দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।’
নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বর্তমান সরকার দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘তারা নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে চলছে। তারা আদায় করতে পারবে না। ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে এই একই অবস্থা চলছিল। জিয়াউর রহমান সাহেব সেটা জাতিসংঘে তুলেছিলেন। জাতিসংঘে তুলেছিলেন বলেই পরে ভারত একটা চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল।’
সরকারবিরোধী আন্দোলনে আগে বিএনপিকে দল গুছিয়ে মাঠে নামার পরামর্শ দেন বিশিষ্টজনরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ৪৬ বছরে তার সক্ষমতা হারায়নি। কিন্তু আজ স্বাধীনতা হারাতে বসেছে। তাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লড়াইও করতে হবে। লড়াইয়ের মাধ্যমেই সেবাদাস সরকারকে সরিয়ে দেশপ্রেমিক সরকার কায়েম করতে হবে।
অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজ বাংলাদেশে যে জঙ্গি সমস্যা তার মূল কারণ ভারত। তারা বলছে ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ভিসা দেবে। তাহলে একাত্তরে কি ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল? তিনি বলেন, বিএনপি সঠিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে দেশে অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, দেশের স্বার্থে তরুণদের মাঠে নামতে হবে, আর চুপচাপ থাকা যাবে না। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নতুন উদ্যোগে জেগে উঠতে হবে।
ফরহাদ মজহার বলেন, দেশের বর্তমান সংকটের সমাধান চাইলে শেখ হাসিনাকে সুষ্ঠু নির্বাচন অবশ্যই করতে হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ ও রুহুল আমীন গাজী, বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাইফুল আলম নীরব, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের জুয়েল, আবদুস শহীদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ইলিয়াস খান, কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবদুল হাই শিকদার। সূচনা বক্তব্য দেন আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ। অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার আ ন হ আখতার হোসেন, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক জেড এন তাহমিদা বেগম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, বাকের হোসাইন প্রমুখ পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা অবিলম্বে আমার দেশ ছাপাখানা খুলে দিয়ে পত্রিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে বলেন, তাঁরা আমার দেশ পড়তে চান। দেশের প্রকৃত খবর জানতে চান। তাঁরা আমার দেশের পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক কর্মচারী যাতে কাজের সুযোগ পান, তার জন্যও আমার দেশ প্রকাশ হওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন।