হেফাজতের আদর্শের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করিনি : কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার কওমি মাদ্রাসার উচ্চশিক্ষার স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা তো হেফাজতের আদর্শের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করিনি।
আজ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরবে রিয়ালিস্টিক কারণে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতা। আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের জনগণের আবেগ-অনুভূতি সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত যারা নিতে পারে তারাই এদেশের সত্যিকারের প্রগতিশীল। বাস্তবতা থেকে প্রগতি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। আমরা তো হেফাজতের আদর্শের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করিনি।
আমাদের আদর্শিক কোনো বিষয়ে সামঞ্জস্যতার আলোচনা করতে যাইনি।’
‘৭০ হাজার কওমি মাদ্রাসার ১৪ লাখ ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে আছে। এটা একটা বাস্তবতা। এটাকে আমরা ইগনোর করতে পারি না, সরকারি স্বীকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারি না। সেটা অবশ্যই বাস্তবতাবিরোধী হবে। আমরা বাংলাদেশের স্বার্থে, জনগণের আবেগ-অনুভূতি একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী পড়াশুনা করে। তাদের ভবিষ্যতকে সরকার অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে না। তাদের শিক্ষার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে কোনো ধর্মীয় রাজনীতি অথবা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস, এটা হাস্যকর। আওয়ামী লীগ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করবে বা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করবে-এটা যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তাদের অভিযোগ। এটা বেগম জিয়ার অভিযোগ। এ দেশে ধর্মের নামে তারা কত অর্ধমের কাজ করেছে। উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির উস্কানিদাতা কারা? এই শক্তির পৃষ্ঠপোষক কারা? এটা সারা দুনিয়া জানে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, হেফাজত মূল বিষয় নয়, আমাদের মূল বিষয় কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি। এখানে হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো অ্যালায়েন্স (জোট) হয়নি। তাদের (হেফাজত) চিন্তা-ধারার সঙ্গে আমাদের চিন্তা-ধারার একটা মিলমিশ হয়ে গেছে এ ধরনের ধারণা কোথা থেকে এলো?
পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্র নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, মুঘল আমল থেকে পহেলা বৈশাখ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, নববর্ষ উদযাপন। মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে ধর্মের কন্টাডিকশন আছে- এটা যারা বলে তারা সত্য কথা বলে না। ধর্মের জায়গাকে আমরা আধুনিক করতে চাই, মূল জায়গায় ফিরিয়ে আনতে চাই। ইসলাম আধুনিকতাকে একসেপ্ট করে। আমরা ধর্মের আধুনিকায়ন চাই। ধর্মীয় শিক্ষাকে আধুনিকায়নের দিকে যেতে হবে, এটা বাস্তবতা। ’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পাঁচ পৃষ্ঠার বক্তব্য গতানুগতিক মিথ্যাচার অন্তঃসারশূন্য অজ্ঞাত তথ্যে ভরপুর। তাঁর বক্তব্যের কোনো সারমর্ম ছিল না। তিনি কিছু চটকদার বায়বীয়, বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করেছেন। যা তাঁর কাছে প্রত্যাশিত ছিল না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, ভারতের সঙ্গে যে ধরনের এমওইউ ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ঠিক একই ধরনের চুক্তি ও এমওইউ পৃথিবীর অন্যান্য বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সঙ্গেও বাংলাদেশের অনুরূপ চুক্তি ও এমওইউ কার্যকর রয়েছে। আমরা অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, অন্য কোনো বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের আগে ও পরে এতো আলোচনা, বক্তব্য, বিবৃতি কোনো রাজনৈতিক মহল থেকে কোনোদিন উচ্চারিত হয়নি।
‘আমি বেগম খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করতে চাই, একমাত্র ভারতের সঙ্গেই সমঝোতা স্মারক হলেই প্রশ্ন উঠবে কেন? ভারত আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতম বন্ধুপ্রতীম দেশ। যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন এবং আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সে দেশের অনেক সৈন্য তাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন।
যেসব রাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে তাদের সঙ্গে এর আগে অনুরূপ চুক্তি সম্পাদনের সময় এ ধরনের প্রশ্ন উঠেনি কেন?’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০০২ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘বাংলাদেশ চায়না ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’ শীর্ষক একটি চুক্তি করেছিলেন। সে চুক্তি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা কি হয়েছিল? আমরা খালেদা জিয়ার কাছে তার জবাব চাই। আমরা ভারতের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তি করেছি।
বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বিএনপি চেয়ারপারসনের এমন মন্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, হাস্যকর। তিনি যা চর্চা করেন, তাই আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন।
নববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা বাতিলের ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের একটা শোভাযাত্রা বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত হতো। আমরা চিন্তা করেছি এ ধরনের শোভাযাত্রায় জনগণের ভোগান্তি হয়। বহুদিন ধরে কোনো ধরনের শোভাযাত্রার পক্ষে আমরা নই।
আমাদের নেত্রীর সংবর্ধনার বড় ধরনের আয়োজন। নেত্রী জানিয়েছেন, জনগণের ভোগান্তি দিয়ে আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই। একই কারণে আমরা শোভাযাত্রা বাতিল করেছি। আমরা গণভবনে নেত্রীর সঙ্গে বৈশাখী উৎসব পালন করব। সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাইরে মানুষের যেন ভোগান্তি না হয়।
কুমিল্লাসহ সারা দেশে দলের শৃঙ্খলাবিরোধীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ‘কেস-টু-কেস’ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে হয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, আবদুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, হাছান মাহমুদ, আব্দুস সবুর, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, আফজাল হোসেন, শামসুন্নাহার চাপা, দেলোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম আমিন, বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু, আনোয়ার হোসেন, উপাধ্যক্ষ রেমং আরেং প্রমুখ।