ভর্তি পরীক্ষার বিনিময়ে টাকা, না দিতে পারলে অপহরণ!

দেশের নামি-দামি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে চাইলে এখন পরীক্ষায় না বসলেও চলে। কারণ টাকা দিলেই আপনার বদলে পরীক্ষা দেবে আরেকজন। আর তার মেধা বিক্রি করে দিব্যি সুযোগ পাওয়া যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার।
মেধা না থাকা সত্ত্বেও দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠগুলোতে ভর্তির এমনই ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কয়েকটি জালিয়াত চক্র। তবে ভয়ও আছে। ভর্তির পর কোনো কারণে টাকা দিতে রাজি না হলে অপহরণ করতেও পিছপা হয় না তারা।
এ ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে সৌরভ নামে এক ছাত্রকে উদ্ধার করা হয়।
আজ শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলে র্যাব ১২-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কোম্পানি কমান্ডার বীণা রানী দাস এসব তথ্য জানান।
বীণা রানী বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নীলক্ষেত এলাকা থেকে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁরা হলেন নোয়াখালীর সুধারামপুর থানাধীন এজবালিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন রোকন (২৬), ইসমাইল হোসেন রুবেল (২৭), টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কাটালিয়াআটা গ্রামের আক্তারুজ্জামান খোকন (২১) ও একই উপজেলার শ্যামলী মাস্টারপাড়ার জাকারিয়া সরকার (২২)। এঁদের মধ্যে রোকন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
বীণা রানী আরো জানান, সংঘবদ্ধ চক্রটি টাকার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুয়া পরীক্ষার্থী সেজে পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে। ভর্তির পর কোনো প্রার্থী চুক্তি মোতাবেক টাকা দিতে না পারলে তাদের অপহরণ করে মুক্তিপণের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার খিলগাতী গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে সালেহ সৌরভ দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ওই জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগও পান। কিন্তু ভালো বিষয়ে সুযোগ না পাওয়ায় ভর্তি হতে অস্বীকৃতি জানান সৌরভ।
চুক্তি মোতাবেক চার লাখ টাকা দিতে না পারায় জালিয়াত চক্র গত ১৫ এপ্রিল টাঙ্গাইল সদর থানা এলাকা থেকে সৌরভকে অপহরণ করে। বিষয়টি সৌরভের বাবা র্যাবকে জানান। পরে র্যাব শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকা থেকে মুক্তিপণ নেওয়ার সময় ওই চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও অপহৃত সৌরভকে উদ্ধার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব কমান্ডার জানান, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রথমে তারা মূল মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও প্রবেশপত্রের মূল কপি নিয়ে নেয়। এরপর ফরম পূরণের আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দিয়ে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে। তারপর ফটোশপের মাধ্যমে প্রবেশপত্রে আসল পরীক্ষার্থীর ছবি সরিয়ে ভুয়া পরীক্ষার্থীর ছবি বসায়। পরে সেই প্রবেশপত্র দিয়ে ভুয়া পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। এরপর পাস করে ভর্তি হতে পারলে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করা হয়েছে বলে জানান বীণা রানী।