ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎকারীদের শাস্তি পেতে হবে

বেসিক ব্যাংকসহ সরকারি অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণের নামে যাঁরা অর্থ আত্মসাৎ বা আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন, তাঁদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আজ সোমবার বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ঋণের নামে টাকা তুলে নিয়ে সেই টাকাকে নিজের মনে করা অন্যায়। টাকা ফেরত না দিলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে অনেকে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছেন।
এ ছাড়া, সরকারি বড় প্রকল্পে কোনো দুর্নীতির খবর থাকলে গণমাধ্যমকর্মীদের তা তুলে ধরার আহ্বান জানান দুদক চেয়ারম্যান। মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা যাঁরা অবৈধভাবে ব্যাংকের অর্থ নিয়েছেন এবং যাঁরা অবৈধভাবে ব্যাংকের অর্থ দিয়েছেন, জনগণের টাকাটা ফেরত দিয়ে আসেন। অথবা আপনারা এটাকে সঠিকভাবে ব্যাংকিং নিয়মনীতির মধ্যে নিয়ে আসেন। তা না হলে আপনারা দেখবেন, কিছুদিন পরে আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’
বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে ৫৬টি মামলা করা হয়েছে। অনেকে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন। কোনো কোনো ঋণ নিয়মিতকরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আপাতত ব্যাংক কর্মকর্তা কিংবা ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে ঋণ গ্রহণকারীদের গ্রেপ্তার অভিযান কিছুটা কম হচ্ছে। তার অর্থ এ নয় যে তাঁদের আর গ্রেপ্তার করা হবে না। আমরা কিছুটা বিরতি দিয়েছি। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যদি এই সময়ের মধ্যে এ জাতীয় অর্থ আদায় হয়ে যায়, তবে সবার জন্য মঙ্গল। তা না হলে জড়িত সবাই কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, কমিশনের অভিযানের কারণে ব্যাংক থেকে অসৎভাবে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমছে। ফলে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ গতিশীল হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে শতকরা ষোলভাগ ‘ক্রেডিট গ্রোথ’ হয়েছে।
ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের অকৃত্রিম বন্ধু হচ্ছে গণমাধ্যম। আমরা গণমাধ্যমের অকুণ্ঠ সমর্থন পাচ্ছি।’ তিনি বলেন, গণমাধ্যমের বদৌলতে কমিশন ২০১৬ সালের হাওরের দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যথাসময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হলে হাওরের এ বছরের বিপর্যয় ঠেকানোর চেষ্টা আরো দৃঢ় হতো।
পিআইবির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে তথ্য কমিশনার নেপাল চন্দ্র সরকার বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, দুদকের মহাপরিচালক ড. মো. শামসুল আরেফিন, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ ই মামুন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন, পিআইবি ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড-এর যৌথ উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।