ধর্ষণের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক গ্রেপ্তার
ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কামরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের ওই শিক্ষক একই বিভাগের এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দেড় বছর ধরে ধর্ষণ করেছেন। এই অভিযোগে করে ওই ছাত্রী গত শুক্রবার ত্রিশাল থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আজ সোমবার সকালে তাঁকে ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তাঁকে গ্রেপ্তারের পর তা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গোপন রাখার চেষ্টা করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে জানা যায়, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের ওই শিক্ষক ও ছাত্রীর বাড়ি শেরপুর জেলার পাশাপাশি এলাকায়। শিক্ষক তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয় হন। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে এবং একই বিভাগের শিক্ষক হওয়ায় তাঁর সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাঁদের সম্পর্কটি প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়। ওই সম্পর্কের দাবিতে শিক্ষক তাঁকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার প্রস্তাব দেন। তিনি তাতে রাজি না হয়ে বিয়ে করতে বলেন। গত বছরের ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ডরমেটরির নিজ কক্ষে ওই শিক্ষক তাঁকে ডেকে নেন। সেখানে যাওয়ার পর শিক্ষক তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার প্রস্তাব দেন। তিনি ভালোবাসার টানে বিয়ের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে সরল বিশ্বাসে শিক্ষকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর দেড় বছর ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই শিক্ষক তাঁর সঙ্গে ক্রমাগত শারীরিক সম্পর্ক করেন। এরপর তিনি নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গত ২৯ এপ্রিল শিক্ষককে বিয়ের জন্য চাপ দিলে শিক্ষক বিয়ে করতে পারবেন না বলে জানান এবং ওই ঘটনা কাউকে না জানাতে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখান।
এজাহারের শেষ অংশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী বলেন, ওই শিক্ষক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত দেড় বছর ধরে তাঁকে ক্রমাগত ধর্ষণ করেছে। এ বিষয়টি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেও সুরাহা করার চেষ্টা করেন।
মামলার ব্যাপারে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরউজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগ তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এর আগে গত ২ মে সকালে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করে বিচার দাবি করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, শিক্ষক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং ওষুধ খাইয়ে তাঁর গর্ভপাত করান। বিচার না পেলে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির আগামীকাল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেই শুক্রবার মামলা করেন ওই ছাত্রী। সেই মামলায় আজ ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তদন্ত কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামসুর রহমানকে সভাপতি ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. মৃণাল ভট্টাচার্য, প্রক্টর জাহিদুল কবীর ও জ্যেষ্ঠ মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মমতাজ বেগমকে সদস্য করা হয়েছে।