শিশুকে বাঁচালেন, এরপরই নিথর হয়ে গেলেন মা

‘বাসটি উল্টে খাদে পড়ে যায়। অনেক যাত্রী বাসটিতে আটকা পড়ে। আমরা দ্রুত সেখানে গেলাম। একে একে যাত্রীদের উদ্ধার করা হচ্ছে। কিন্তু বেশ ভেতরের দিকে আটকা পড়েন এক নারী। চিৎকার করছিলেন। তাঁর কাছে তিন বছর বয়সী একটি শিশু। তিনি ওই শিশুর মা। কোনোমতেই ওই নারীর কাছে পৌঁছানো যাচ্ছিল না।
একপর্যায়ে বাসের জানালা ভাঙেন ওই নারী। বের করে দেন তাঁর শিশুকে। নিরাপদে উদ্ধার করা হয় ওই শিশুকে। এরপরই নিথর হয়ে যান ওই মা। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা এসে ড্রিল মেশিন দিয়ে বাসের অংশবিশেষ কেটে ওই মাকে বের করে আনেন। ততক্ষণে ওই মা হারিয়েছেন প্রাণ।’
হবিগঞ্জের কাইতপাড়া গ্রামের আবদুস শহীদ এসব কথা বলছিলেন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে নিজের শিশুকে বাঁচিয়েছেন ওই মা।
আজ সোমবার হবিগঞ্জের লস্করপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সিলেট থেকে কুমিল্লাগামী বাসটির চাকা পাংচার হয়ে যায়, পরে তা উল্টে খাদে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় কেবল উদ্ধার হওয়া ওই শিশুর মা নিহত হয়েছেন। তবে নিহতের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৩০ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিলেট থেকে কুমিল্লাগামী একটি যাত্রীবাহী বাস লস্করপুরে পৌঁছালে চাকা পাংচার হয়ে উল্টে গিয়ে খাদে পড়ে যায়। খবর পেয়ে বাহুবল থানার পুলিশ ও শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। এরই মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা ৩০ জনকে বাসের ভেতর থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠান। পরে শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ারস্টেশনের স্টেশন অফিসার জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল উদ্ধারকর্মী ঘটনাস্থলে এসে ড্রিল মেশিন দিয়ে বাসের অংশবিশেষ কেটে এক নারীর লাশ উদ্ধার করেন। একই সময় অজ্ঞাতপরিচয় অন্য এক নারীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
জেলা পুলিশের (বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেল) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রাসেলুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি হচ্ছিল। আর ওই সময় বাসটির গতিবেগ বেশি থাকায় চাকা পাংচার হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এরপরই বাসটি উল্টে যায়। শিশুটির পরিচয় মেলেনি, পাওয়া যায়নি শিশুটির বাবাকেও।’