খুলনায় বিএনপি নেতা হত্যায় অন্য নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ

খুলনায় বিএনপি নেতা সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ও তাঁর দেহরক্ষী নওশের গাজী হত্যাকাণ্ডে অন্য এক বিএনপি নেতার সংশ্লিষ্টতা আছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মামুন রহমান নামের এক লন্ডনপ্রবাসী ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য অর্থ খরচ করেন।
আজ মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. দিদার আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ফুলতলা উপজেলার নিজ কার্যালয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ও তাঁর দেহরক্ষী নওশের গাজী।
সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য
অভিযুক্ত মামুন রহমান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লন্ডন প্রবাসী মামুন রহমানের ৩০ লাখ টাকার বিনিয়োগে মিঠুর পারিবারিক প্রতিপক্ষরা এই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করে।’ তিনি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলে একটি পুরাতন শটগান সাংবাদিকদের দেখান। দিদার বলেন, ‘মামুন রহমান থানা বিএনপির সদস্য সচিব হাসনাত রিজভী মার্শালের মাধ্যমে এই টাকা প্রদান করেছেন।’
গতকাল সোমবার বিএনপি নেতা মার্শালকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)।
ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, ‘এরই মধ্যে তিনজন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন বিএনপি নেতা হাসনাত রিজভী মার্শাল, মিঠুর দুই দেহরক্ষী শিমুল হাওলাদার ও মাশফেকুর রহমান রিপন।’
দিদার আহমেদ জানান, এখন পর্যন্ত ওই জোড়া হত্যা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চতুর্থ ব্যক্তির নাম রনি। তাঁর কাছ থেকেই অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান। দিদার আহমেদ বলেন, ‘কিলিং মিশনে চার-পাঁচজন অংশগ্রহণ করেন আর পরিকল্পনায় আরো চারজন ছিল।
দিদার আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি কিছুটা রাজনৈতিক ও পারিবারিক কলহ থেকে শুরু হয়েছে।’
হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কোনো ‘জজ মিয়া নাটকের’ জন্ম দিবে কি না এমন প্রশ্ন করলে ডিআইজি বলেন, ‘না তেমন কিছু হবে না। কারণ এরইমধ্যে তিনজন আসামি দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।’
হত্যার কারণ সম্পর্কে ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ও লন্ডনপ্রবাসী মামুন রহমান। তাঁরই বিনিয়োগে ওই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন এলাকার ভূঁইয়া পরিবারের শিমুল ভূঁইয়া।’
শিমুল ভূঁইয়া চরমপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তিনি পলাতক।
জানা যায়, শিমুল ভূঁইয়া পরিবারের সঙ্গে আলাউদ্দিন মিঠুদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব বহুদিনের। তিনি আলাউদ্দিন মিঠুর বাবা দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আবুল কাশেম হত্যা মামলার আসামি। ১৯৯৮ সালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন আবুল কাশেম। শিমুল ভূঁইয়ার ভাই শরীফ মোহাম্মদ শিপলু ভূঁইয়া বর্তমানে দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান।
দুই আওয়ামী লীগ নেতার নাম নেই
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আলাউদ্দিন মিঠু হত্যা প্রচেষ্টা মামলার বিষয়টিও উঠে আসে। ২০১০ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় মিঠুর ওপর হামলা হয়। পরে মিঠু বাদী হয়ে ফুলতলা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন ও দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান শিপলু ভূঁইয়ার নাম উল্লেখ করে মামলা করে ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তদন্ত শেষে দুই চেয়ারম্যানের নাম বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়। এতে সরদার আলাউদ্দিন মিঠু দ্বিতীয় দফা আদালতে নারাজি দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি খুলনা মহানগর পুলিশ বলতে পারবে।’
নিহত মিঠুর বড় ভাই সরদার সেলিম বলেন, ‘মিঠু জীবদ্দশায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম হোসেন এবং দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শিপলু ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টার মামলা করলেও পুলিশ ওই দুই নেতার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিষয়টি হতাশাজনক। তিনি জানান, তাঁর পরিবারকে এখন হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
‘অবিশ্বাস্য ও অস্পষ্ট’
এদিকে ওই হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতাদের জড়ানোর বিষয়টিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি দিদার আহমেদের বক্তব্য অবিশ্বাস্য ও অস্পষ্ট। কোনো বিএনপি নেতা নিজ দলের নেতাদের হত্যা করতে পারে না।’
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন ‘কোনো আসামি গ্রেপ্তার হলো না, রিমান্ড হলো না। সব উদ্ধার হয়ে গেল। আর যার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার দেখানো হচ্ছে সেই রনি একজন মাদকসেবী।’