চিনি অবিক্রীত, বেতন-ভাতা বন্ধ তিন মাস

জয়পুরহাট সুগার মিলস লিমিটেডের ৩৫ কোটি টাকার চিনি বিক্রি হয়নি। আর এ কারণে শ্রমিক-কর্মচারীরা তিন মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এ চিনিকলের স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
আর্থিক সংকট মোকাবিলায় নগদ অর্থ পাওয়ার আশায় সম্প্রতি এক ও দুই কেজির প্যাকেট বানিয়ে খোলাবাজারে এ মিলের উৎপাদিত চিনি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এতেও ক্রেতাদের তেমন সাড়া মিলছে না। চিনি বিক্রির টাকায় এবার উৎসব বোনাস দূরের কথা, ঈদের আগে বকেয়া তিন মাসের বেতন পাওয়া নিয়ে চরম দুর্ভাবনায় পড়েছেন কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা।
গুণে ও মানে উৎকৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও দেশের বৃহত্তম চিনিকল জয়পুরহাট সুগার মিলস লিমিটেডের গুদামে গত চার মৌসুমের মোট নয় হাজার ৪৩ দশমিক ৬০ টন চিনি এখন অবিক্রীত পড়ে রয়েছে। প্রতি কেজি ৩৭ টাকা হিসেবে যার মোট মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩৫কোটি টাকা।
আমদানি করা বিদেশি চিনির মূল্য কম হওয়ায় ১৭ জন পাইকারি ও ১৫ স্থানীয় ডিলারের কেউই মিলের উৎপাদিত চিনি গুদাম থেকে উত্তোলন করছেন না। আর এই বিপুল পরিমাণ চিনি অবিক্রীত থাকায় নগদ টাকার অভাবে বাড়ছে মিলের আর্থিক সংকট। টাকার অভাবে মিলের কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বন্ধ হয়ে রয়েছে। এতে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের চরম কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করতে হচ্ছে। তিন মাসের বেতন পরিশোধ করতে হলে মিলের আড়াই কোটি টাকার প্রয়োজন।
সংকট নিরসনের জন্য বাংলাদেশ চিনি খাদ্য ও শিল্প করপোরেশনের নির্দেশে খুচরা বিক্রির জন্য এক ও দুই কেজির প্যাকেট তৈরি করে খোলাবাজারে চিনি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু আমদানি করা অন্য চিনির চেয়ে ওই মিলের চিনির মূল্য প্রতি কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেশি হওয়ায় এতে ক্রেতাদের সাড়া মিলছে না।
সংকট মোকাবিলায় কম দামে বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিনি ও ‘র’ চিনির (‘র’ সুগার) ওপর অধিক হারে মূল্য সংযোজন করসহ বিভিন্ন কর বসিয়ে দেশীয় চিনি বিক্রির পথ সুগম করে দেশীয় চিনিশিল্পকে রক্ষার দাবি জানালেন জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আফজাল হোসেন।
মিলের বিপুল পরিমাণ চিনি বিক্রি না হওয়ায় চরম আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরে এ ব্যাপারে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘জয়পুরহাটের মতো দেশের অন্য চিনিকলগুলোর পরিস্থিতিও একই রকম।’
এ ব্যাপারে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘খোলাবাজারে খুচরা এক/দুই কেজির প্যাকেটে চিনি বিক্রির উদ্যোগ ভালো। তবে এতে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। এই চিনি বিক্রি বৃদ্ধি পেলে চিনিকলের আর্থিক সংকট দূর হবে এবং তখন শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন ও ভাতা প্রদান করা সম্ভব হবে।’