শুষ্ক স্থানে হঠাৎ পানির ফোয়ারা!

খরাপ্রবণ হিসেবে পরিচিত বরেন্দ্র জনপদ। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে খাঁ খাঁ করে পুরো এলাকা। সেই বরেন্দ্র অঞ্চলের একটি স্থান থেকে বের হয়েছে পানির ফোয়ারা। ওই পানি ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকায়।
ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের হলুদডাঙা মাঠে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকস্মিকভাবে ওই মাঠ থেকে পানি বের হচ্ছে। পানি সংকটের এ এলাকায় আকস্মিক মাটি থেকে পানি বের হওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন পানি দেখতে ছুটে আসছে। অনেকে কলস ও বোতলে করে বাড়িতে পানি নিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় এ ঘটনাকে অলৌকিক দাবি করে পূজা-অর্চনা শুরু করেছে। তারা এ ঘটনাকে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ হিসেবে দেখছে।
কামারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রথীন্দ্রনাথ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের হলুদডাঙা মাঠের টিলার কোল ঘেঁষে একটি জায়গা থেকে পানি বের হতে দেখা যায়। এ খবর আশপাশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় আদিবাসীরা সেখানে পূজা-অর্চনা শুরু করেছে।
রথীন্দ্রনাথ আরো বলেন, গত এক সপ্তাহে এ এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত হয়নি। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুমেও আশপাশের এলাকায় পানির অভাবে ধান চাষ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। গরমের সময় এ এলাকার মানুষ চরম পানির সমস্যায় ভোগে। সে কারণে হঠাৎ এ ঘটনাকে স্থানীয় মানুষ সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ হিসেবেই ধরে নিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকেই এ পানি বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছে।
আদিবাসী সবুজ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত মানুষ পানি বের হওয়ার স্থানে ভিড় করছে। বেশির ভাগ মানুষ হাতে বোতল নিয়ে পানি সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছে। গত শনিবার সকাল থেকে সেখানে তিনটি দোকান বসেছে।
স্থানীয়দের আরো কয়েকজন জানায়, আশপাশের তিন থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে নদী, খাড়ির মতো কোনো স্থানীয় পানির উৎস নেই ওই এলাকায়। যে স্থানে এ ঘটনা ঘটেছে তার আশপাশে গভীর নলকূপ খুড়েও পানি পাওয়া যায়নি। এ অঞ্চলে পানির স্তর ১২০ থেকে ১৩০ ফুট নিচে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ামতপুর উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, ‘সাধারণত বাতাসের চাপ পানির চাপের চেয়ে কম হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’
যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে ঘটলেও সাধারণত বাংলাদেশে ঘটে না। বায়ুর চাপ যদি পানির চাপ থেকে কমে যায় তাহলে ভূ-গর্ভস্থ পানি বের হয়ে আসতে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত বায়ুর চাপ পানির চাপের চেয়ে বেশি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত মাটির নিচ থেকে পানি বের হবে।’ বরেন্দ্র জনপদের শুষ্ক অঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম বলেও মন্তব্য করেন গোলাম সাব্বির সাত্তার।