ইউএনওর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে এখনো অনঢ় ওবায়েদুল্লাহ

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা করা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এই মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এরপরও সাজু বলছেন, তিনি মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কিছু ভাবছেন না।
ওবায়েদুল্লাহ সাজু বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি একই সঙ্গে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজু মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে বলেন, ‘মামলাটি প্রত্যাহার করব কি করব না, সেটা পরের ব্যাপার। আগামী ২৩ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সেদিনই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।’
ওবায়েদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, তিনি মামলা করেছেন, বিচারক সমন দিয়েছেন। সমনের জবাব দিতে হাজির হওয়ার পর বিচারক ইউএনওকে জেলে পাঠিয়েছেন। দুই ঘণ্টা পর সেই বিচারকই আবার ইউএনওকে জামিন দিয়েছেন। এই বিষয়টি তিনিই ভালো জানেন। তা ছাড়া তাঁর দায়িত্ব ছিল মামলা দায়ের করা পর্যন্ত। বিচারক কেন তাঁকে জেলাহাজতে পাঠালেন, সেটা আদালতের ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই।
আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত ওই নেতা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় গাজী তারিক সালমনের জন্ম হয়নি। তিনি কখনো বঙ্গবন্ধুকে দেখেননি। বঙ্গবন্ধুর মতো অবিসংবাদিত নেতার ছবি কার্ডের পেছনের পৃষ্ঠায় দিয়ে তাঁকে অসম্মান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন বঙ্গবন্ধুকে কেউ অসম্মান করার সাহস না পায় সেই জন্য মামলা করা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আঁকা ছবি প্রসঙ্গে ওবায়েদুল্লাহ জানান, ছবিটি যে কোনো শিশুর আঁকা ছিল তা আগে তিনি জানতেন না। ওই ছবি দাওয়াতপত্রে ছাপিয়ে ইউএনও বঙ্গবন্ধুকে অপমান করেছেন। দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়েও তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
‘ষড়যন্ত্রের’ শিকার ইউএনও
ইউএনও গাজী তারিক সালমন দাবি করেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তাঁর বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী নিজে এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার করবেন।
তারিক সালমন বলেন, ‘আমি আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে যারা আমাকে দিয়ে অন্যায় কাজ করাতে পারেনি সেই প্রভাবশালীরাই আমার বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে। আমি জানি, প্রধানমন্ত্রী সুবিবেচক, তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি আমাকে বুঝবেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার ভালো লাগা, শ্রদ্ধার কথা। আমার বিশ্বাস, তিনি নিজেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’
ইউএনও আরো বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারিনি যে একটি শিশুর আঁকা ছবি নিয়ে মামলা হতে পারে। তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) অশ্রদ্ধা বা বিকৃতির প্রশ্নই ওঠে না। আমি চাই, আমার বিরুদ্ধে যাঁরা ষড়যন্ত্র করেছেন, তাঁদের বিচার হোক।’
ওবায়েদুল্লাহর বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন স্থানীয়রা
ওবায়েদুল্লাহকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। এ বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসকে পাওয়া যায়নি। অন্য নেতারাও একইভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এ ছাড়া ওবায়েদুল্লাহ আইনজীবী সমিতির সভাপতি হওয়ায় জেলা আইনজীবী সমিতির কোনো নেতা বা সদস্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গত ৭ জুন ইউএনও তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওবায়েদুল্লাহ সাজু। মামলায় অভিযোগ করা হয়, জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্কিৃত করে ছাপা হয়েছে।
তারিক সালমন বর্তমানে বরগুনা সদর উপজেলার ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।